আজ থেকে মাঠে নামবে যশোর পুলিশ-এসপি
- আপডেট সময় : ০৩:৪৭:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ অগাস্ট ২০২৪ ৬২ বার পড়া হয়েছে
যশোর স্টাফ রিপোর্টার:-
গতকাল চতুর্থ দিনের মত কর্মবিরতিতে ছিল পুলিশ। যশোর কোতোয়ালি থানাসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পাহারা দিতে দেখা গেছে আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্যদের। আর ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন না করায় হাতে লাঠি, মুখে বাঁশি আর মাথায় হেলমেট পরে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে চলেছেন সমন্বিত শিক্ষার্থীরা।
গতকাল আরো বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী সড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণ ও ট্রাফিক শৃংখলা রক্ষায় কাজ করেছেন। একইসাথে শহর পরিচ্ছন্নতার কাজও করে চলেছেন। এদিকে গতকাল সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে পুলিশ সদস্যদের স্ব স্ব ইউনিটে উপস্থিত হয়ে কাজে যোগদানের নির্দেশনা থাকলেও কার্যত তা বাস্তবায়িত হয়নি। তবে পুলিশ সুপার মাসুদ আলম পিপিএম বিপিএম বার আশা করছেন কাল থেকে মাঠে নামবে যশোর পুলিশ। মানুষ যথাযথ পুলিশি সেবা পেতে শুরু করবেন।
বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলন ও সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন চলার সময় পুলিশের উপর হামলা, বর্বরচিত ও লোমহর্ষক অনেকগুলো হত্যাকান্ডের ঘটনায় দেশব্যাপি পুলিশের কর্মবিরতি শুরু করে অধীনস্থ পুলিশ সদস্যরা। আর তাদের ১১ দফার দাবিতে চলা পুলিশি কর্মবিরতির চতুর্থ দিন গতকালও যশোরের কোনো রাস্তায় পুলিশকে দেখা যায়নি। পুলিশ শূন্য ছিল যশোর। থানা, ফাঁড়ি, ক্যাম্পের আশেপাশেও তাদের দেখা মেলেনি। গতকালও রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ ছিলনা। ছিল শুধু সাধারণ মানুষের উপস্থিতি। বিগত কয়েকদিনের মত গতকালও শিক্ষার্থীরাই ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকায় ছিলেন। এ নিয়ে ৫, ৬, ৭ ও গতকাল ৮ আগস্ট পুলিশ শূণ্য যশোরে কার্যত রাস্তায় যানবাহনের শৃঙ্খলা ফেরাতে উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে কাজ করেছেন ছাত্র ছাত্রীরা। ট্রাফিক পুলিশের অনুপস্থিতিতে তারা কাঁধে তুলে নিয়েছেন ট্রাফিকের গুরু দায়িত্ব।
স্থান ও মোড় ভিত্তিক কর্ম সিডিউল ও তালিকা করে গতকাল যশোর শহরের দড়াটানা, থানা মোড়, হাসপাতাল মোড়, কেন্দ্রীয় কারাগার মোড়, পালবাড়ি, মণিহার এলাকা, আইনজীবী ভবন মোড়, প্রেসক্লাব মোড়, সার্কিট হাউস মোড়, খাজুরা বাসস্ট্যান্ড, হাইকোর্ট মোড়, চাঁচড়া চেকপোস্ট মোড়, ধর্মতলা, পুলিশ লাইন, টালিখোলা, খয়েরতলা, চিত্রা মোড়, চারখাম্বা মোড়, জিলা স্কুল মোড়সহ আরো কয়েকটি স্পটে শিক্ষার্থীরা সুচারুভাবে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেছেন। অনেকটা রাজধানী ঢাকার আদলে এক পাশের যানবাহন ছাড়লে অন্য তিন দিকের যানবাহন আটকে রাখছেন। একই সাথে শহরের বিভিন স্পট পরিস্কার ও পরিছন্নতার কাজ করেছেন তারা। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সাথে স্কাউটস, রোভার স্কাউটস, বিএনসিসিসহ আরো কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী ছাত্র সংগঠনের শিক্ষার্থীরা তাদের পোষাক টুপি জুতো পরে ট্রাফিক পুলিশের মতই ট্রাফিক ব্যবস্থা সমুন্নত রাখছেন।তবে গতকাল দিনভর এমনকি রাত ১০টা পর্যন্ত সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে তথ্য মিলেছে, আইজিপির নির্দেশনা থাকলেও সন্ধ্যার মধ্যে পুলিশ স্ব স্ব ইউনিটে উপস্থিত হননি পুলিশ সদস্যরা। গেটে তালা ঝুলিয়ে যশোর কোতোয়ালি থানা পাহারা দিতে দেখা গেছে ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যদের। রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে সরকার যাতে পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনসহ ১১ দফা দাবিতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা। গত কয়েকদিন দেশের বিভিন্নস্থানের বিভিন্ন ইউনিটে পুলিশ সদস্যরা সাদাপোশাকে ‘পুলিশ অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যানারে তারা বিক্ষোভ করে আসছেন। ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশ হত্যাসহ পুলিশি স্থাপনায় ধ্বংসযঞ্জ চালানো ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচার, পুলিশ বাহিনীকে দিয়ে মৌখিক নির্দেশনা কোনো কাজ না করানো, নিহত হওয়া পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান, আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা সুনিশ্চিত করাসহ ১১দফা দাবি রয়েছে পুলিশ সদস্যদের। চলমান এই কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে গতকাল সন্ধ্যার মধ্যে পুলিশ সদস্যদের স্ব স্ব ইউনিটে যোগদান করার নির্দেশনা দেন আইজিপি। কিন্তু গতকাল রাত পর্যন্ত তা যথাযথভাবে কার্যকর হয়নি। অধিকাংশ পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তা সন্ধ্যার মধ্যে যোগদান করেননি।
এ ব্যাপারে যশোরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম পিপিএম, বিপিএম বার জানিয়েছেন, যশোরের পুলিশ একেবারে কর্মবিরতি পালন করছেন এটা ঠিক নয়। থানায় জিডি ও অভিযোগ নেয়া হচ্ছে। তবে নির্দেশনা অনুয়ায়ী গতকাল সন্ধ্যার মধ্যে যশোরের সব পুলিশ সদস্য তাদের স্ব স্ব ইউনিটে পরিপূর্ণভাবে যোগ দেননি। তবে আজ থেকে যশোর পুলিশ মাঠে নামবে বলে তিনি আশা করছেন। যশোরের মানুষ যথাযথ পুলিশি সেবা পাবেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে আনসার ও ভিডিপির যশোর জেলা কমান্ড্যান্ট সঞ্জয় কুমার সাহা জানিয়েছেন, চলমান পুলিশের কর্মবিরতির কারণে যশোর শহরে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আনসার দেয়া হয়েছে। এছাড়া যশোর কোতোয়ালি থানায় আনসার ব্যাটালিয়নদের নিযুক্ত করা হয়েছে পাহারার জন্য। শহরের আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানে আনসার দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া শহরে টহলে ব্যাটালিয়নের একটি টিম রাখা হয়েছে।