দিনাজপুরে আগাম জাতের আলু চাষ শুরু করেছে কৃষক
- আপডেট সময় : ১১:৪৩:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪ ২৩ বার পড়া হয়েছে
দিনাজপুর জেলার ১৩ টি উপজেলায় আগাম জাতের আলু চাষ শুরু হয়েছে । এ পর্যন্ত সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষকরা আলুর বীজ রোপণ করেছে। অগ্রহায়ণ মাসের প্রথমে বাজারের নতুন আলু উঠার সম্ভাবনা রয়েছে। দিনাজপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ নুরুজ্জামান মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।তিনি বলেন, এবারে জেলায় ৪৭ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যেও আগাম জাতের আলু চাষ হবে ১১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে।
গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলার ১৩টি উপজেলাতে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষকরা আগাম জাতের আলু বীজ রোপণ শেষ করেছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই আগাম জাতের আলুর বীজ রোপণ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সম্পন্ন হয়ে যাবে। কৃষকরা প্রতিযোগিতা করে আগাম জাতের আলু চাষ করে থাকেন। যে কৃষকের ক্ষেতের আলু আগে বাজারে উঠাতে পারবে, ওই কৃষক ভালো দাম পাবে।
ভালো দাম পাওয়ার আশায় কৃষকরা আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি আমন ধান কর্তন করে ওই জমিতে পুনরায় আলু চাষের জন্য প্রস্তুত করে, আগাম জাতের আলু বীজ রোপণ করেছে। অনেক কৃষকের আলুর বীজ লাগানো প্রায় ২০ থেকে ২৫ দিন হয়ে গেছে। তাদের আলুর একটু গাছ বড় হয়েছে। সারিবদ্ধ ভাবে গাছের গোড়া মাটি দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। বাংলা নবান্নের অগ্রহায়ণের প্রথমেই নতুন আলু দিয়ে নবান্ন উৎসব হবে বলে অনেক আলু চাষী আশাবাদ ব্যক্ত করছেন।
দিনাজপুর সদর উপজেলার আউলিয়াপুর গ্রামের কৃষক রাশেদুল ইসলাম বলেন, এবারে আলুর বীজ সার কীটনাশক ও মজুরীর দাম বেড়ে যাওয়ায় আগাম আলু চাষে ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। তবু কৃষকরা আগাম জাতের আলু চাষে লাভের স্বপ্ন দেখছেন। চাষাবাদে ব্যয় বাড়লেও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় স্বল্প মেয়াদী আগাম আমন ধান ঘরে তুলে ওই জমিতে আলুর জন্য হাল চাষ,পরিচর্যা, সার প্রয়োগ, হিমাগার থেকে বীজ সংগ্রহ ও রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা।
কৃষি বিভাগের সূত্রটি জানায়, জেলার বীরগঞ্জ উপজেলায় প্রতি বছর আলুর চাষ ও উৎপাদন বেশি হয়। এখনও আমন ধান কাটা-মাড়াই শেষ না হলে, চাষীরা তাদের আবাদি জমি গুলো ফেলে না রেখে আগে ভাগেই আলু চাষ শুরু করেছেন। আগাম জাতের আলু উত্তোলন করে ওই জমিতে আবার বিভিন্ন ধরনের রবি মৌসুমের শাক-সবজি চাষ করবেন।এভাবেই এখন কৃষকেরা কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীদের পরামর্শে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারে উঁচু জমি গুলোতে বছরের ৩ থেকে ৪ টি ফসল উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সবজি জাতীয় ফসল চাষ করে এ অঞ্চলের কৃষকেরা অধিক মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে।
জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষি কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান জানান, উপজেলার বিভিন্ন উঁচু জমি গুলোতে আলু চাষ শুরু হয়েছে ।আগাম জাতের অ্যাস্টেরিক ও কার্টিনাল,লাল পাকড়ি, রোমানা,ডয়িমন্ড,আলু রোপণের ৫০ থেকে ৬০ দিনে তা বিক্রির উপযোগী হয়ে থাকে। কিছুটা অধিক পুষ্টিকর ও তুলনা মূলক কম সময় লাগায় এ আলু চাষ করে লাভবান হওয়া যায় সহজেই। তাই যে চাষী সঠিক ভাবে জমিতে যতœ করতে পারবেন, তাদের ভালো ফলন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
তিনি বলেন, গত বছরের মতো এবারও আগাম আলু চাষে নেমেছেন চাষীরা। আলু চাষের জন্য বেলে ও দোঁ-আশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। এখন চাষীরা কখনও জমি ফেলে রাখেন না। মৌসুমের ভারসাম্য অনুযায়ী বিভিন্ন সবজি আবাদের পর তারা এবারও আগাম আলু চাষ করছেন।আগাম জাতের অ্যাস্টেরিক ও কার্টিনাল আলুতে অতিরিক্ত মুনাফা হওয়ায় চাষীরা বেশ আকৃষ্ট হয়েছেন।
বিরল উপজেলার মাজাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, তিনিসহ অধিকাংশ কৃষক আলু চাষের প্রস্তুতকৃত জমিতে আলুর বীজ রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চাষীরা তাদের জমি তৈরি করে অ্যাস্টেরিক ও কার্টিনাল জাতের বীজ আলু মাঠে নিয়ে আসছেন। বীজ আলু কেটে প্রস্তুত করছেন। এরপর সেই আলু জমিতে রোপণ করা হচ্ছে।
বিরামপুর উপজেলা ঘুরে চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হবে। ধান মাড়াই শেষ হলে উপজেলার চাষীরা একযোগে তাদের জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু চাষ করবেন। রবি শস্যের উঁচু জমি চাষের জন্য প্রস্তুত করছেন চাষীরা, আবার আলগা মাটি সমান করতে জমিতে দিচ্ছেন মই। অন্যদিকে আলু বীজ রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
কৃষি বিভাগের সূত্র জানায়, বর্তমানে বাজার থেকে কৃষকেরা লাল পাকরি আলুর বীজ কিনছেন প্রতিকেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়, আর কার্ডিনাল জাতের বীজ প্রতিকেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়।
চলতি বছর আলুর বীজের দাম অনেক বেশি। একাধিক চাষী জানান,প্রতি বছর অতিরিক্ত মুনাফার লক্ষ্যে তাদের মতো অনেকেই আগাম আলু চাষ করেন। তবে চলতি বছর আলুর বীজের দাম তুলনামূলক অনেক বেশি। বীজ কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন চাষীরা।
কাহারোল উপজেলার কৃষক হারুনুর রশিদ হারুন, জানান,আগাম জাতের চাষে উৎপাদিত আলুর ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন। এবার তিনি আলু চাষে মনোযোগ দিয়েছেন। ফলন ভালো হলে অধিক মুনাফা পাওয়ার আশা করছেন। গত বছর তিনি সাড়ে ৮ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। এ বছর দাম বেশি থাকায় ১২ বিঘা জমিতে আলুর চাষ শুরু করেছেন। তবে বীজের দাম বেশি থাকায় এবং শ্রমিকের মজুরী বাড়ায় গতবারের চেয়ে এবার আলু চাষের খরচ বেড়েছে বলে জানান।
ওই উপজেলার শ্রমিকরা জানান,এলাকার হামিদুর রহমানের প্রায় ১০ বিঘা জমিতে অ্যাস্টেরিক জাতের আলু রোপণের কাজ করে তারা পাচ্ছেন ৫০০ টাকা মজুরী। সেসঙ্গে একবেলা খাবার রয়েছে। এ আয় দিয়ে চলে তাদের সংসার। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সহিদুজ্জামান জানান, শুকনো মাটির জমি আলু চাষের জন্য উপযোগী। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তুলনামূলক উঁচু জমিতে আলু চাষ শুরু হয়েছে। অতিরিক্ত লাভের আশায় অনেকেই তাদের জমিতে আলু চাষ শুরু করেছেন। আমন ধান কাটার পর এসব জমিতে একযোগে আলুর আবাদ শুরু হয়েছে। বাসস