ঢাকা ০৮:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে চীনের ইউনান প্রদেশের গভর্নরের সাক্ষাৎ নগরীর যানজট নিরসনে হকার ব্যবস্থাপনা জরুরি : চসিক মেয়র পত্রপত্রিকা, টেলিভিশন টক-শো দেখেন, কেমন একটা অস্থিরতা চলছে দেশে আগামী প্রজন্মকে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ারও আহ্বান: দুদক চেয়ারম্যান ৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার হলে নিষিদ্ধ সামগ্রীসহ প্রবেশ করা যাবে না রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে: জাপান রাষ্ট্রদূত দ্রুত ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করবে টাইগাররা: সালাহউদ্দিন চলতি গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে: পিডিবি চেয়ারম্যান সংস্কার না করে কোনো নির্বাচনে ভালো ফল পাওয়া যাবে না: তোফায়েল আহমেদ রাজধানীর ফকিরাপুলে অগ্নিকাণ্ডে একই পরিবারের ৩ জন দগ্ধ

পেটের ক্ষুধায় কচ্ছপ খেতে বাধ্য হচ্ছেন গাজার মুসলিমরা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:৩০:৫৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫ ৩ বার পড়া হয়েছে

অবরুদ্ধ ও যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় খাবারের ভয়াবহ সংকটে পড়ে কিছু মুসলিম পরিবার এখন প্রোটিনের বিরল উৎস হিসেবে সামুদ্রিক কচ্ছপের মাংস খেতে বাধ্য হচ্ছেন। ফিলিস্তিনের খান ইউনিস থেকে এএফপি জানায়, কচ্ছপের খোলস ছাড়ানোর পর মাংস টুকরো টুকরো করে কেটে পেঁয়াজ, মরিচ, টমেটো ও মসলা মিশিয়ে রান্না করে খাচ্ছেন তারা। খান ইউনিস শহরের এক অস্থায়ী তাঁবুতে থাকা ৬১ বছর বয়সী মাজিদা কানান বললেন, ‘শিশুরা কচ্ছপ দেখে ভয় পায়। তখন আমরা বলি, এর স্বাদ গরুর মাংসের মতোই সুস্বাদু।’ তিনি কাঠের চুলায় রান্না হওয়া লালচে মাংসের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘তবু কেউ কেউ খেয়েছে, কেউ খেতে চায়নি।

তবে এর বিকল্প কিছু না থাকায় ইতোমধ্যে তৃতীয়বারের মতো কচ্ছপ রান্না করলেন তিনি। ইসরাইলি আগ্রাসনের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়ে তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া পরিবারটির এখন আর কোনো উপায় নেই। গাজায় ১৮ মাসের ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ এবং ২ মার্চ থেকে ইসরাইলের পূর্ণ অবরোধের মধ্যে জাতিসংঘ জানিয়েছে, ২৪ লাখ ফিলিস্তিনির জন্য পরিস্থিতি চরম মানবিক সংকটে পৌঁছেছে। ইসরাইল হামাসের বিরুদ্ধে ত্রাণ সহায়তা সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তুললেও হামাস তা অস্বীকার করেছে।

বৃহস্পতিবার বিশ্বের ১২টি প্রধান ত্রাণ সংস্থার প্রধানরা সতর্ক করে বলেছেন, ‘গাজার প্রায় সব অঞ্চলেই দুর্ভিক্ষ এখন শুধু সম্ভাবনা নয়, বরং দ্রুত বাস্তব হয়ে উঠছে। মাজিদা কানান বলেন, ‘কোনো বন্দর খোলা নেই, বাজারেও কিছু নেই। তিনি আরও বলেন, ‘আমি ৮০ শেকেল (২২ ডলার) দিয়ে ছোট দুইব্যাগ সবজি কিনেছি, মাংস কেনার প্রশ্নই ওঠে না। যদিও সামুদ্রিক কচ্ছপ আন্তর্জাতিকভাবে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী হিসেবে সংরক্ষিত, তবু গাজার জেলেদের জালে ধরা পড়া কচ্ছপ এখন খাবারে রূপ নিচ্ছে। তিনি জানান, কচ্ছপের মাংস ভিনেগার ও ময়দা মিশিয়ে ধুয়ে নেওয়া হয়, এরপর ধুয়ে পুরনো একটি লোহার পাতিলে সেদ্ধ করা হয় ।

ভাবতেও পারিনি কচ্ছপ খেতে হবে’স্থানীয় জেলে আবদেল হালিম কানান বলেন, ‘আমরা কখনও ভাবিনি যে কচ্ছপ খেতে হবে। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর খাবারের মারাত্মক ঘাটতি দেখা দেয়। তখন কচ্ছপের মাংস হয়ে ওঠে প্রোটিনের বিকল্প উৎস। এখন গাজায় মাংস, মুরগি বা সবজি-কিছুই নেই। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক কার্যালয় (ওসিএইচএ) জানায়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরাইল আক্রমণের পর শুরু হওয়া যুদ্ধে গাজা এখন সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটে রয়েছে। এই যুদ্ধ দু’বার স্বল্প সময়ের জন্য থেমেছিল-একবার নভেম্বর ২০২৩-এর শেষ দিকে সাত দিনের জন্য এবং পরে ১৯ জানুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত দুই মাসের জন্য।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক প্রধান হানান বালখি গত জুনে জানান, গাজায় কিছু মানুষ পশুর খাবার, ঘাস এমনকি মলমূত্রযুক্ত পানি খেয়েও বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। হামাস বৃহস্পতিবার ইসরাইলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে যে, গাজাবাসীদের প্রতি তারা ‘অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে’ ব্যবহার করছে-ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে। জেলে কানান বলেন, ‘কচ্ছপগুলো হালাল উপায়ে জবাই করা হয়, ইসলামি রীতিতেই। দুর্ভিক্ষ না থাকলে আমরা ওগুলো খেতাম না। কিন্তু এখন আমাদের প্রোটিন ঘাটতি পূরণ করতে হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

পেটের ক্ষুধায় কচ্ছপ খেতে বাধ্য হচ্ছেন গাজার মুসলিমরা

আপডেট সময় : ১২:৩০:৫৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

অবরুদ্ধ ও যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় খাবারের ভয়াবহ সংকটে পড়ে কিছু মুসলিম পরিবার এখন প্রোটিনের বিরল উৎস হিসেবে সামুদ্রিক কচ্ছপের মাংস খেতে বাধ্য হচ্ছেন। ফিলিস্তিনের খান ইউনিস থেকে এএফপি জানায়, কচ্ছপের খোলস ছাড়ানোর পর মাংস টুকরো টুকরো করে কেটে পেঁয়াজ, মরিচ, টমেটো ও মসলা মিশিয়ে রান্না করে খাচ্ছেন তারা। খান ইউনিস শহরের এক অস্থায়ী তাঁবুতে থাকা ৬১ বছর বয়সী মাজিদা কানান বললেন, ‘শিশুরা কচ্ছপ দেখে ভয় পায়। তখন আমরা বলি, এর স্বাদ গরুর মাংসের মতোই সুস্বাদু।’ তিনি কাঠের চুলায় রান্না হওয়া লালচে মাংসের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘তবু কেউ কেউ খেয়েছে, কেউ খেতে চায়নি।

তবে এর বিকল্প কিছু না থাকায় ইতোমধ্যে তৃতীয়বারের মতো কচ্ছপ রান্না করলেন তিনি। ইসরাইলি আগ্রাসনের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়ে তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া পরিবারটির এখন আর কোনো উপায় নেই। গাজায় ১৮ মাসের ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ এবং ২ মার্চ থেকে ইসরাইলের পূর্ণ অবরোধের মধ্যে জাতিসংঘ জানিয়েছে, ২৪ লাখ ফিলিস্তিনির জন্য পরিস্থিতি চরম মানবিক সংকটে পৌঁছেছে। ইসরাইল হামাসের বিরুদ্ধে ত্রাণ সহায়তা সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তুললেও হামাস তা অস্বীকার করেছে।

বৃহস্পতিবার বিশ্বের ১২টি প্রধান ত্রাণ সংস্থার প্রধানরা সতর্ক করে বলেছেন, ‘গাজার প্রায় সব অঞ্চলেই দুর্ভিক্ষ এখন শুধু সম্ভাবনা নয়, বরং দ্রুত বাস্তব হয়ে উঠছে। মাজিদা কানান বলেন, ‘কোনো বন্দর খোলা নেই, বাজারেও কিছু নেই। তিনি আরও বলেন, ‘আমি ৮০ শেকেল (২২ ডলার) দিয়ে ছোট দুইব্যাগ সবজি কিনেছি, মাংস কেনার প্রশ্নই ওঠে না। যদিও সামুদ্রিক কচ্ছপ আন্তর্জাতিকভাবে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী হিসেবে সংরক্ষিত, তবু গাজার জেলেদের জালে ধরা পড়া কচ্ছপ এখন খাবারে রূপ নিচ্ছে। তিনি জানান, কচ্ছপের মাংস ভিনেগার ও ময়দা মিশিয়ে ধুয়ে নেওয়া হয়, এরপর ধুয়ে পুরনো একটি লোহার পাতিলে সেদ্ধ করা হয় ।

ভাবতেও পারিনি কচ্ছপ খেতে হবে’স্থানীয় জেলে আবদেল হালিম কানান বলেন, ‘আমরা কখনও ভাবিনি যে কচ্ছপ খেতে হবে। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর খাবারের মারাত্মক ঘাটতি দেখা দেয়। তখন কচ্ছপের মাংস হয়ে ওঠে প্রোটিনের বিকল্প উৎস। এখন গাজায় মাংস, মুরগি বা সবজি-কিছুই নেই। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক কার্যালয় (ওসিএইচএ) জানায়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরাইল আক্রমণের পর শুরু হওয়া যুদ্ধে গাজা এখন সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটে রয়েছে। এই যুদ্ধ দু’বার স্বল্প সময়ের জন্য থেমেছিল-একবার নভেম্বর ২০২৩-এর শেষ দিকে সাত দিনের জন্য এবং পরে ১৯ জানুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত দুই মাসের জন্য।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক প্রধান হানান বালখি গত জুনে জানান, গাজায় কিছু মানুষ পশুর খাবার, ঘাস এমনকি মলমূত্রযুক্ত পানি খেয়েও বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। হামাস বৃহস্পতিবার ইসরাইলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে যে, গাজাবাসীদের প্রতি তারা ‘অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে’ ব্যবহার করছে-ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে। জেলে কানান বলেন, ‘কচ্ছপগুলো হালাল উপায়ে জবাই করা হয়, ইসলামি রীতিতেই। দুর্ভিক্ষ না থাকলে আমরা ওগুলো খেতাম না। কিন্তু এখন আমাদের প্রোটিন ঘাটতি পূরণ করতে হচ্ছে।