ঢাকা ০৮:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজধানীতে প্রায় ১৫ কোটি টাকা মূল্যের জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্পসহ ৪ জন গ্রেফতার

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৩০:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪ ১৮ বার পড়া হয়েছে

রাজধানীতে জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প, নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প এবং কোর্ট ফি প্রস্তুতকারী সিন্ডিকেটের চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের সদস্যরা গতকাল সোমবার ও আজ মঙ্গলবার দু’দিনে ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। ডিএমপি’র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ কথা জানানো হয়।গ্রেফতারকৃতরা হলো, মোসা. হাজেরা বেগম (৫৫), মো. জাহাঙ্গীর আলম জীবন (৩১), মো. মাসুদ রানা (২৫) ও মো. আলীম শেখ (২৫)।

তাদের কাছ থেকে ১৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকার ৫০০, ২০০, ১০০, ৫০, ১০ টাকা মূল্যমানের মোট ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ টি জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প, নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি এবং জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প বিক্রির নগদ এক লাখ ৪৬ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া জাল স্ট্যাম্প তৈরিতে ব্যবহৃত দুটি ছাপা খানা জব্দ করা হয় এবং জাল স্ট্যাম্প তৈরিতে ব্যবহৃত ২০টি ডাইস, একটি ল্যাপটপ, একটি আয়রন মেশিন, একটি সেলাই মেশিন, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তিনটি মোবাইল ফোন, স্ট্যাম্প তৈরির কাজে ব্যবহৃত আঠার ২৫টি টিউব ও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে জাল স্ট্যাম্প প্রেরণের আট পাতা স্লিপ উদ্ধার করা হয়।

ডিবি পুলিশ সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় মতিঝিল থানার ফকিরাপুল এলাকায় অভিযান চালিয়ে আদিল মিয়ার গলিতে অবস্থিত জাল স্ট্যাম্প ব্যবসায়ী রিপন মোল্লার ভাড়াটে গোডাউনের সামনে থেকে রিপন মোল্লার কর্মচারী মো. আলীম শেখকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় রিপন মোল্লার গোডাউন থেকে বিভিন্ন জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প, নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প এবং কোর্ট ফি স্ট্যাম্প ও জাল স্ট্যাম্প তৈরির ডাইস উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আলীম শেখকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, উদ্ধারকৃত ডাইস ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প রিপনমোল্লার এ গোডাউনে রেখেছে এবং তা দেখাশোনা করার জন্য তাকে নিযুক্ত করেছে।গ্রেফতারকৃত আলীম শেখ জানায়, এসব স্ট্যাম্প জনৈক জুয়েল রানার প্রিন্টিং প্রেস থেকে প্রিন্ট করা হয়েছে।

সে আরও জানায়, বিজয় সরণির এয়ারপোর্ট রোড সুপার মার্কেটের ২য় তলায় রিপন মোল্লার একটি গোপন কারখানা এবং সাভার থানার রাজফুলবাড়ী শোভাপুর এলাকায় আরও একটি গোপন প্রিন্টিং প্রেস রয়েছে। এ সংবাদের ভিত্তিতে জুয়েল রানার প্রেসে অভিযান চালিয়ে তােক গ্রেফতারের চেষ্টা করা হলে সে কৌশলে পালিয়ে যায়। জুয়েল রানার ভাড়া করা প্রেস থেকে বিভিন্ন জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প , কোর্ট ফি স্ট্যাম্প এবং একটি প্রিন্টিং মেশিন জব্দ করা হয়। এরপর বিজয় সরণি এয়ারপোর্ট রোড সুপার মার্কেটের ২য় তলার দোকানে অভিযান চালিয়ে প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের জাল কোর্ট ফি স্ট্যাম্প, ডাইস ও জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরির আয়রন মেশিন জব্দ করা হয়।

অন্যদিকে গোয়েন্দা পুলিশের আরেকটি টিম সোমবার বিকেল ৫ টায় সাভার থানার শোভাপুর এলাকায় রিপনমোল্লার ভাড়া করা দোকানে অভিযান চালিয়ে জাল স্ট্যাম্প তৈরির একটি প্রিন্টিং মেশিনসহ বিপুল পরিমাণ জাল স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি স্ট্যাম্প ও ডাইস উদ্ধার করে। পরবর্তীতে গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় একই দিন রাত ৮টায় মিরপুর মডেল থানার মধ্য পাইকপাড়া এলাকার একটি বাসা থেকে মো. জাহাঙ্গীর আলম ও হাজেরা বেগমকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় হাজেরা বেগমের বাসা থেকে জাল স্ট্যাম্প তৈরির কাজে ব্যবহৃত একটি সেলাই মেশিন ও প্রায় ছয় কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়।

তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তার স্বামী মোজাম্মেল হক এসব জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প এবং নন- জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প তৈরির মূল হোতা। গ্রেফতারকৃত মো. জাহাঙ্গীর আলম জীবনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে তার কথিত স্যানিটারি ব্যবসার আড়ালে তার পিতা ও পরিবারের অনান্য সদস্যদের নিয়ে জাল, নকল স্ট্যাম্প প্রস্তুত ও বিক্রি করতো। হাজেরা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, মিরপুর মডেল থানার দক্ষিণ পাইকপাড়ার ২৭৪ নং বাসায় তার স্বামীর আরেকটি গোপন গোডাউন রয়েছে।

এ তথ্যের ভিত্তিতে ওই দিন রাত পৌনে ১০টার দিকে উক্ত গোডাউনে অভিযান চালিয়ে জাল স্ট্যাম্প তৈরির কাজে নিয়োজিত অবস্থায় মো. মাসুদ রানাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে পলাতক আসামী মোজাম্মেল হকের নিকট আত্মীয়। সে জাল স্ট্যাম্প প্রস্তুতের কারিগর হিসেবে কাজ করে এবং মোজাম্মেল হকের ভাড়া করা গোডাউনে বসে জাল স্ট্যাম্প প্রস্তুত করে। এ গোডাউন থেকে বিপুল পরিমাণ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প, নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প এবং কোর্ট ফি স্ট্যাম্পসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

রাজধানীতে প্রায় ১৫ কোটি টাকা মূল্যের জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্পসহ ৪ জন গ্রেফতার

আপডেট সময় : ১১:৩০:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪

রাজধানীতে জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প, নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প এবং কোর্ট ফি প্রস্তুতকারী সিন্ডিকেটের চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের সদস্যরা গতকাল সোমবার ও আজ মঙ্গলবার দু’দিনে ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। ডিএমপি’র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ কথা জানানো হয়।গ্রেফতারকৃতরা হলো, মোসা. হাজেরা বেগম (৫৫), মো. জাহাঙ্গীর আলম জীবন (৩১), মো. মাসুদ রানা (২৫) ও মো. আলীম শেখ (২৫)।

তাদের কাছ থেকে ১৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকার ৫০০, ২০০, ১০০, ৫০, ১০ টাকা মূল্যমানের মোট ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ টি জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প, নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি এবং জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প বিক্রির নগদ এক লাখ ৪৬ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া জাল স্ট্যাম্প তৈরিতে ব্যবহৃত দুটি ছাপা খানা জব্দ করা হয় এবং জাল স্ট্যাম্প তৈরিতে ব্যবহৃত ২০টি ডাইস, একটি ল্যাপটপ, একটি আয়রন মেশিন, একটি সেলাই মেশিন, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তিনটি মোবাইল ফোন, স্ট্যাম্প তৈরির কাজে ব্যবহৃত আঠার ২৫টি টিউব ও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে জাল স্ট্যাম্প প্রেরণের আট পাতা স্লিপ উদ্ধার করা হয়।

ডিবি পুলিশ সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় মতিঝিল থানার ফকিরাপুল এলাকায় অভিযান চালিয়ে আদিল মিয়ার গলিতে অবস্থিত জাল স্ট্যাম্প ব্যবসায়ী রিপন মোল্লার ভাড়াটে গোডাউনের সামনে থেকে রিপন মোল্লার কর্মচারী মো. আলীম শেখকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় রিপন মোল্লার গোডাউন থেকে বিভিন্ন জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প, নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প এবং কোর্ট ফি স্ট্যাম্প ও জাল স্ট্যাম্প তৈরির ডাইস উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আলীম শেখকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, উদ্ধারকৃত ডাইস ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প রিপনমোল্লার এ গোডাউনে রেখেছে এবং তা দেখাশোনা করার জন্য তাকে নিযুক্ত করেছে।গ্রেফতারকৃত আলীম শেখ জানায়, এসব স্ট্যাম্প জনৈক জুয়েল রানার প্রিন্টিং প্রেস থেকে প্রিন্ট করা হয়েছে।

সে আরও জানায়, বিজয় সরণির এয়ারপোর্ট রোড সুপার মার্কেটের ২য় তলায় রিপন মোল্লার একটি গোপন কারখানা এবং সাভার থানার রাজফুলবাড়ী শোভাপুর এলাকায় আরও একটি গোপন প্রিন্টিং প্রেস রয়েছে। এ সংবাদের ভিত্তিতে জুয়েল রানার প্রেসে অভিযান চালিয়ে তােক গ্রেফতারের চেষ্টা করা হলে সে কৌশলে পালিয়ে যায়। জুয়েল রানার ভাড়া করা প্রেস থেকে বিভিন্ন জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প , কোর্ট ফি স্ট্যাম্প এবং একটি প্রিন্টিং মেশিন জব্দ করা হয়। এরপর বিজয় সরণি এয়ারপোর্ট রোড সুপার মার্কেটের ২য় তলার দোকানে অভিযান চালিয়ে প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের জাল কোর্ট ফি স্ট্যাম্প, ডাইস ও জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরির আয়রন মেশিন জব্দ করা হয়।

অন্যদিকে গোয়েন্দা পুলিশের আরেকটি টিম সোমবার বিকেল ৫ টায় সাভার থানার শোভাপুর এলাকায় রিপনমোল্লার ভাড়া করা দোকানে অভিযান চালিয়ে জাল স্ট্যাম্প তৈরির একটি প্রিন্টিং মেশিনসহ বিপুল পরিমাণ জাল স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি স্ট্যাম্প ও ডাইস উদ্ধার করে। পরবর্তীতে গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় একই দিন রাত ৮টায় মিরপুর মডেল থানার মধ্য পাইকপাড়া এলাকার একটি বাসা থেকে মো. জাহাঙ্গীর আলম ও হাজেরা বেগমকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় হাজেরা বেগমের বাসা থেকে জাল স্ট্যাম্প তৈরির কাজে ব্যবহৃত একটি সেলাই মেশিন ও প্রায় ছয় কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়।

তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তার স্বামী মোজাম্মেল হক এসব জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প এবং নন- জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প তৈরির মূল হোতা। গ্রেফতারকৃত মো. জাহাঙ্গীর আলম জীবনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে তার কথিত স্যানিটারি ব্যবসার আড়ালে তার পিতা ও পরিবারের অনান্য সদস্যদের নিয়ে জাল, নকল স্ট্যাম্প প্রস্তুত ও বিক্রি করতো। হাজেরা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, মিরপুর মডেল থানার দক্ষিণ পাইকপাড়ার ২৭৪ নং বাসায় তার স্বামীর আরেকটি গোপন গোডাউন রয়েছে।

এ তথ্যের ভিত্তিতে ওই দিন রাত পৌনে ১০টার দিকে উক্ত গোডাউনে অভিযান চালিয়ে জাল স্ট্যাম্প তৈরির কাজে নিয়োজিত অবস্থায় মো. মাসুদ রানাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে পলাতক আসামী মোজাম্মেল হকের নিকট আত্মীয়। সে জাল স্ট্যাম্প প্রস্তুতের কারিগর হিসেবে কাজ করে এবং মোজাম্মেল হকের ভাড়া করা গোডাউনে বসে জাল স্ট্যাম্প প্রস্তুত করে। এ গোডাউন থেকে বিপুল পরিমাণ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প, নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প এবং কোর্ট ফি স্ট্যাম্পসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।