ঢাকা ০৫:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের ইতিহাসে ‘সেরা নির্বাচন’ আয়োজন করবে: প্রধান উপদেষ্টা নগরীর মশক নিধনে যুক্ত হচ্ছে সেনাবাহিনী: ডিএনসিসি প্রশাসক ঝালকাঠিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীর ওপর হামলার অভিযোগ ‘জুলাই রেভ্যুলুশনারি এ্যালায়েন্স’ কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা নেতা নয়, জনগণের সেবক হয়ে থাকতে চাই: কায়কোবাদ এখন সকলে মিলে নতুন বাংলাদেশ গড়ার সময় এসেছে: আলী রীয়াজ পেটের ক্ষুধায় কচ্ছপ খেতে বাধ্য হচ্ছেন গাজার মুসলিমরা সংস্কারের নামে জনগণের সঙ্গে নাটক করছে অন্তবতীকালীন সরকার: কর্নেল অলি স্পোর্টস হাবকে কেন্দ্র করে স্পোর্টস ইকো-সিস্টেম গড়ে উঠবে বিশ্বে প্রথমবার বেইজিংয়ে হাফ ম্যারাথনে অংশ নিল দু-পেয়ে রোবট

সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় একজনেরও হত্যার প্রমাণ পায়নি পুলিশ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৩৬:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ৩২ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদ ৫ আগস্টের পর সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ২৩ হত্যাকাণ্ডের দাবি করলেও পুলিশের তদন্তে একজনেরও প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। এছাড়া তারা ১৭৪টি ঘটনার যে তথ্য দিয়েছে সেটিও সঠিক নয়। সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান। উপ-প্রেস সচিব বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কোনো ধরনের সংহিসতাকেই সমর্থন করে না। একইসঙ্গে এ ধরনের ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বলে প্রচার করা উদ্বেগজনক বলে মনে করে সরকার।

এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা দেশের সার্বিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের সূত্রপাত ঘটাতে পারে বিবেচনায় সব পক্ষকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানায় অন্তর্বর্তী সরকার। তিনি বলেন, তদন্তে ২৩টি ঘটনার মধ্যে ২২টি ঘটনার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। একটি ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়নি। এগুলো বেশিরভাগ ছিল ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক ও পারিবারিক ঘটনা। এমনকি আগের ঘটনাকে এবারের ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার সম্পর্ক নেই।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছে যে গণঅভ্যুত্থানের পর গত সাড়ে চার মাসে দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় ২৩ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। এমন দাবি সঠিক নয় উল্লেখ করে ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি বলেন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নিহত দাবি করা ২৩টি ঘটনার বাস্তব কারণ জানতে অধিকরত তদন্তের জন্য পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেয় এবং উল্লিখিত ২৩টি হত্যাকাণ্ডের তালিকা সংগ্রহ করে। ওই তালিকা প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পুলিশের কাছে পাঠিয়ে প্রতিটি ঘটনার প্রকৃত কারণ ও গৃহীত আইনি ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।পুলিশ সদরদপ্তর থেকে প্রতিটি ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানায়।

উল্লিখিত ২৩টি ঘটনার ২২টির প্রাথমিক কারণ সম্পর্কে পুলিশ অবগত হয়েছে এবং যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তবে একটি ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত কোন তথ্য পায়নি পুলিশ। যে ২২টি ঘটনার বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে তার মধ্যে একটি ঘটনার সঙ্গেও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কোন সম্পর্ক নেই। হত্যাকাণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ সাতটির সঙ্গে চুরি ও দস্যুতার সম্পর্ক রয়েছে, চারটিতে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কলহের ঘটনা জড়িত, তিনটির ক্ষেত্রে জেনারেল ক্রাইম যেমন ধর্ষণ, অতিরিক্ত মদ পান এবং বিদ্রুপ মন্তব্য করা নিয়ে দুই পক্ষের মারামারি থেকে মৃত্যু, দুইটি দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু, দুইটি ব্যবসায়িক শত্রুতার জেরে মৃত্যু, একটিতে স্থানীয়দের মধ্যে সংঘাতে মৃত্যু, একটি জমিজমার বিরোধ সংক্রান্ত ঘটনায় মৃত্যু, একটি আত্মহত্যার ঘটনা এবং একটি ঘটনায় মৃত্যুর প্রকৃত কারণ এখনো না জানা গেলেও এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে সেখানে কোন সাম্প্রদায়িক সংঘাতের বিষয় নেই।

এই তালিকায় এমন ব্যক্তিও রয়েছেন যিনি গত বছরের জানুয়ারি মাসে একটি ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ডিসেম্বর মাসে হাসপাতালে মারা যান। এক্ষেত্রে প্রত্যেকটি ঘটনাকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে আইনি পদক্ষেপ ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। এই ২৩ ঘটনার দুটিতে যেখানে আত্মহত্যা ও পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা রয়েছে সেই দুটি ঘটনায় পুলিশ ইতোমধ্যে তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। অপর ২১টি তদন্তাধীন মামলায় ইতোমধ্যে ৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ১৭ জন নিজেদের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এক প্রশ্নের উত্তরে আবুল কালাম আজাদ বলেন, যারা মারা গেছেন তাদের বিচার নিশ্চিত করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তদন্ত করে দেখা হোক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা আছে কি না। ঐক্য পরিষদকে আহ্বান করেছি তারাও সঠিক তদন্ত করুক। তারা বলেছে, বেশিরভাগ তথ্য গণমাধ্যম থেকে নেওয়া। আমরা তদন্ত করে দেখেছি গণমাধ্যমে আসা ঘটনাগুলো সাম্প্রদায়িক ঘটনা না। তারপরও হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদকে আহ্বান জানাবো, তারা যেন প্রকৃত ঘটনা নিবিড়ভাবে তদন্ত করে। এদিকে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম অভিযোগ করেন, ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় একজনেরও হত্যার প্রমাণ পায়নি পুলিশ

আপডেট সময় : ১১:৩৬:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদ ৫ আগস্টের পর সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ২৩ হত্যাকাণ্ডের দাবি করলেও পুলিশের তদন্তে একজনেরও প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। এছাড়া তারা ১৭৪টি ঘটনার যে তথ্য দিয়েছে সেটিও সঠিক নয়। সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান। উপ-প্রেস সচিব বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কোনো ধরনের সংহিসতাকেই সমর্থন করে না। একইসঙ্গে এ ধরনের ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বলে প্রচার করা উদ্বেগজনক বলে মনে করে সরকার।

এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা দেশের সার্বিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের সূত্রপাত ঘটাতে পারে বিবেচনায় সব পক্ষকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানায় অন্তর্বর্তী সরকার। তিনি বলেন, তদন্তে ২৩টি ঘটনার মধ্যে ২২টি ঘটনার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। একটি ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়নি। এগুলো বেশিরভাগ ছিল ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক ও পারিবারিক ঘটনা। এমনকি আগের ঘটনাকে এবারের ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার সম্পর্ক নেই।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছে যে গণঅভ্যুত্থানের পর গত সাড়ে চার মাসে দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় ২৩ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। এমন দাবি সঠিক নয় উল্লেখ করে ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি বলেন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নিহত দাবি করা ২৩টি ঘটনার বাস্তব কারণ জানতে অধিকরত তদন্তের জন্য পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেয় এবং উল্লিখিত ২৩টি হত্যাকাণ্ডের তালিকা সংগ্রহ করে। ওই তালিকা প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পুলিশের কাছে পাঠিয়ে প্রতিটি ঘটনার প্রকৃত কারণ ও গৃহীত আইনি ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।পুলিশ সদরদপ্তর থেকে প্রতিটি ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানায়।

উল্লিখিত ২৩টি ঘটনার ২২টির প্রাথমিক কারণ সম্পর্কে পুলিশ অবগত হয়েছে এবং যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তবে একটি ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত কোন তথ্য পায়নি পুলিশ। যে ২২টি ঘটনার বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে তার মধ্যে একটি ঘটনার সঙ্গেও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কোন সম্পর্ক নেই। হত্যাকাণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ সাতটির সঙ্গে চুরি ও দস্যুতার সম্পর্ক রয়েছে, চারটিতে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কলহের ঘটনা জড়িত, তিনটির ক্ষেত্রে জেনারেল ক্রাইম যেমন ধর্ষণ, অতিরিক্ত মদ পান এবং বিদ্রুপ মন্তব্য করা নিয়ে দুই পক্ষের মারামারি থেকে মৃত্যু, দুইটি দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু, দুইটি ব্যবসায়িক শত্রুতার জেরে মৃত্যু, একটিতে স্থানীয়দের মধ্যে সংঘাতে মৃত্যু, একটি জমিজমার বিরোধ সংক্রান্ত ঘটনায় মৃত্যু, একটি আত্মহত্যার ঘটনা এবং একটি ঘটনায় মৃত্যুর প্রকৃত কারণ এখনো না জানা গেলেও এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে সেখানে কোন সাম্প্রদায়িক সংঘাতের বিষয় নেই।

এই তালিকায় এমন ব্যক্তিও রয়েছেন যিনি গত বছরের জানুয়ারি মাসে একটি ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ডিসেম্বর মাসে হাসপাতালে মারা যান। এক্ষেত্রে প্রত্যেকটি ঘটনাকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে আইনি পদক্ষেপ ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। এই ২৩ ঘটনার দুটিতে যেখানে আত্মহত্যা ও পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা রয়েছে সেই দুটি ঘটনায় পুলিশ ইতোমধ্যে তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। অপর ২১টি তদন্তাধীন মামলায় ইতোমধ্যে ৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ১৭ জন নিজেদের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এক প্রশ্নের উত্তরে আবুল কালাম আজাদ বলেন, যারা মারা গেছেন তাদের বিচার নিশ্চিত করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তদন্ত করে দেখা হোক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা আছে কি না। ঐক্য পরিষদকে আহ্বান করেছি তারাও সঠিক তদন্ত করুক। তারা বলেছে, বেশিরভাগ তথ্য গণমাধ্যম থেকে নেওয়া। আমরা তদন্ত করে দেখেছি গণমাধ্যমে আসা ঘটনাগুলো সাম্প্রদায়িক ঘটনা না। তারপরও হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদকে আহ্বান জানাবো, তারা যেন প্রকৃত ঘটনা নিবিড়ভাবে তদন্ত করে। এদিকে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম অভিযোগ করেন, ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে।