অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ-২০২৪ খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন
- আপডেট সময় : ১০:৫০:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪ ১৪ বার পড়া হয়েছে
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আইনি কাঠামোয় আনতে জারি করা হচ্ছে অধ্যাদেশ। এটি জারি হলে আদালতে গিয়ে প্রশ্ন তুলে বর্তমান সরকারকে অবৈধ ঘোষণা বা বাতিল করা যাবে না। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার দিন পর্যন্ত হবে সরকারের মেয়াদ। সম্প্রতি ‘অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
এতে বলা হয়, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে এবং সংবিধান বা অন্য কোনো আইন দিয়ে নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য ও সহায়তা দেবে অন্তর্বর্তী সরকার। বিলুপ্ত হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতোই থাকছে প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের পদমর্যাদা। উপদেষ্টা পরিষদে নিয়োগ পাবেন না ২৫ বছরের কম বয়সীরা। সরকারি কর্মচারীদের সহায়তায় অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করবে।
অধ্যাদেশ কত দিনের মধ্যে জারি হতে পারে, তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেওয়ার পর আমরা বিভিন্ন বিষয় পরীক্ষা করেছি। সরকারের পক্ষ থেকে আর কোনো নির্দেশনা না আসায় খসড়া চূড়ান্ত করা হয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা সমকালকে জানিয়েছেন, অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এই খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগে পাঠানো হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এটি চূড়ান্ত করা হবে। তারপর রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে জারি করার ব্যবস্থা হবে। এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার এমন অধ্যাদেশ জারি করলে এটি নিয়ে আইনগত নানা প্রশ্ন উঠতে পারে বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, হঠাৎ করে এমন অধ্যাদেশের প্রয়োজন হলো কেন?
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত হওয়ায় বর্তমানে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তী সরকার ব্যবস্থা এবং প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টার পদ বলে কিছু নেই। এ কারণে অন্তর্বর্তী সরকারের আইনি ভিত্তি নিয়ে যাতে প্রশ্ন না ওঠে, সে জন্য অধ্যাদেশ জারি করা হবে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
এতে বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টাদের মতোই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টাদের পদমর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় উপদেষ্টাদের সর্বোচ্চ সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া থাকলেও এখন উপদেষ্টাদের সর্বোচ্চ সংখ্যা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে না। খসড়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ-সংক্রান্ত ধারায় বলা হয়েছে, যে তারিখে প্রধান উপদেষ্টা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, সেই তারিখ থেকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন প্রধানমন্ত্রী কার্যভার গ্রহণ করার তারিখ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার বহাল থাকবে। এর আগে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার মেয়াদ ছিল ৯০ দিন।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ কী হবে, তা-ও ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে অধ্যাদেশে। এ-সংক্রান্ত ধারায় বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার একটি অস্থায়ী বা সাময়িক সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। সরকারি কর্মচারীদের সহায়তায় সরকার কাজ করবে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে এবং সংবিধান বা অন্য কোনো আইন দিয়ে নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য ও সহায়তা দেবে।
‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক প্রণীত অধ্যাদেশ ও কার্যক্রমের বৈধতা’ ধারায় বলা হয়েছে, ‘সংবিধান এবং আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর যাহা কিছুই থাকুক না কেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়া এবং নতুন সংসদ গঠিত হইবার পর প্রধানমন্ত্রী যে তারিখে তাঁহার পদের কার্যভার গ্রহণ করিবেন, সেই তারিখের (উভয় দিনসহ) মধ্যবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক প্রয়োগকৃত সকল ক্ষমতা, প্রণীত সকল অধ্যাদেশ, বিধিমালা, প্রবিধানমালা, জারীকৃত প্রজ্ঞাপন, প্রদত্ত আদেশ, কৃতকার্য, গৃহীত ব্যবস্থা আইন অনুযায়ী যথাযথভাবে প্রয়োগকৃত, প্রণীত, জারীকৃত, প্রদত্ত, কৃত এবং গৃহীত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে এবং বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টসহ অন্য কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষ ইহাদের বৈধতা সম্পর্কে কোনোভাবেই কোনো প্রশ্ন উত্থাপন কিংবা ইহাদেরকে অবৈধ বা বাতিল করিতে পারিবে না।
এতে আরও বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন, প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টাদের নিয়োগ নিয়ে ত্রুটি থাকলে সে জন্য কোনো কাজ অবৈধ হবে না। এ জন্য কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন বা মামলা দায়েরও করা যাবে না। অধ্যাদেশের খসড়ায় প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা প্রসঙ্গে বলা হয়, বিদ্যমান অন্যান্য আইনে যা কিছুই বলা থাকুক না কেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শ নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে কাজ করতে হবে। জরুরি অবস্থা ঘোষণার বৈধতার জন্য প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শ নিতে হবে।