বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বাড়াতে এবং আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা জোরদার করতে ঋণের শ্রেণিবিন্যাস ও বিধান সংক্রান্ত মাস্টার সার্কুলার (পরিপত্র) জারি করেছে। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২৭ সালের মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস ৯) অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর জন্য প্রত্যাশিত ক্রেডিট লস (ইসিএল) পদ্ধতি-ভিত্তিক প্রভিশনিং সিস্টেম বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করেছে। পরিপত্র অনুসারে, সকল ঋণ ও অগ্রিম শ্রেণীবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে চারটি বিভাগে বিভক্ত করা হবে, যথা: (ক) অব্যাহত ঋণ, (খ) চাহিদা ঋণ, (গ) নির্দিষ্ট স্থায়ী মেয়াদি ঋণ, ও (ঘ) স্বল্পমেয়াদি কৃষি ঋণ।মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখের পরের দিন থেকে বা বাধ্যতামূলক ঋণ তৈরির দিন থেকে বা ঋণ ও অগ্রিমের বিভিন্ন শ্রেণীর ওপর নির্ভর করে পরিশোধ বা নবায়ন না করা হলে নির্ধারিত তারিখ থেকে সকল ধরণের ঋণ বকেয়া বা ওভারডিউ হিসাবে গণ্য হবে।
যদি নির্দিষ্ট মেয়াদি ঋণের কোনো কিস্তি বা কিস্তির অংশ নির্দিষ্ট মেয়াদ বা নির্ধারিত তারিখের মধ্যে পরিশোধ না করা হয়, তাহলে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরের দিন বা শেষ তারিখ থেকে অপ্রদেয় কিস্তির পরিমাণ বকেয়া বা ওভারডিউ হিসাবে বিবেচিত হবে।সব ধরণের ঋণ ছয়টি বিভাগে শ্রেণীবদ্ধ করা হবে: স্ট্যান্ডার্ড-০ (এসটিডি-০), স্ট্যান্ডার্ড-১ (এসটিডি-১), স্ট্যান্ডার্ড-২ (এসটিডি-২), বিশেষ উল্লেখ অ্যাকাউন্ট (এসএমএ), সাব-স্ট্যান্ডার্ড (এসএস) ও সন্দেহজনক (ডিএফ)।ঋণের কিস্তি তিন মাসের বেশি এবং ছয় মাসের কম সময়ের জন্য বকেয়া থাকলে ব্যাংকগুলো বর্তমানে ঋণকে ‘সাব-স্ট্যান্ডার্ড’ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করতে পারবে। ছয় থেকে ১২ মাসের মধ্যে বকেয়া ঋণকে ‘সন্দেহজনক’ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা যাবে। ১২ মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলে ঋণগুলোকে মন্দ ঋণ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হবে।
গুণগত বিচারে যে কোনো ঋণকে ঝুঁকির ওপর ভিত্তি করে এবং/অথবা যদি বাস্তবিক মানদণ্ডের ভিত্তিতে এর কোনো বকেয়া বা ওভারডিউ না থাকলেও সম্পূর্ণ পরিশোধের সম্ভাবনা না থাকে তখন এগুলোকে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে। এই ধরনের শ্রেণীবিন্যাস ঋণগ্রহীতার ঋণ গ্রহণ করার যোগ্যতার অবনতির মাত্রা এবং পরিশোধের ওপর প্রত্যাশিত প্রভাব প্রতিফলিত করবে। বস্তুনিষ্ঠ মানদণ্ডের ভিত্তিতে ব্যাংক বা বাংলাদেশ ব্যাংক দ্বারা কোন ঋণ শ্রেণীবদ্ধ করা হলে, এটি চুক্তি অনুসারে বকেয়া বা ওভারডিউ অর্থ পরিশোধের ওপর নির্ভর করে আরও অনুকূল শ্রেণীবিভাগে স্থানান্তর করা যেতে পারে। ব্যাঙ্কের বিবেচনায় সময়ে সময়ে যদি একটি ঋণ গুণগত বিচারের ভিত্তিতে ব্যাঙ্কের দ্বারা শ্রেণীবদ্ধ করা হয়, এটি আরও অনুকূল শ্রেণীবিভাগে স্থানান্তরিত হতে পারে।
সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশ্লেষণকালে প্রমাণ থাকতে যে, ঋণের অর্থ প্রদানের সক্ষমতা এবং/অথবা ঋণগ্রহীতার আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক/সিইও এ বিষয়ে একটি ঋণের শ্রেণীকরণের ক্ষেত্রে বি/এল থেকে ডিএফ-এ বা ডিএফ থেকে এসএস-এ ক্রমান্বয়ে ঋণ স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত উপযুক্ত যুক্তিসহ গ্রহণ করতে পারেন।গুণগত বিচারের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনের সময় কোনো ঋণকে শ্রেণীবদ্ধ করা হলে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং পরিদর্শন বিভাগের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সম্মতি ব্যতীত তা শ্রেণীবদ্ধ করা যাবে না। ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং পরিদর্শন বিভাগের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এমন কোনো ঋণের শ্রেণীবিভাগ পর্যালোচনা করার জন্য অনুরোধ করতে পারে যার জন্য শ্রেণীবিভাগের বিষয়ে মতভেদ আছে যা সাইটে পরিদর্শনের সময় সমাধান করা হয়নি।
তবে, যদি কোনো ক্ষেত্রে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা দ্বারা নির্ধারিত শ্রেণীবিভাগ এবং ব্যাংকিং পরিদর্শন সংশ্লিষ্ট বিভাগ দ্বারা নির্ধারিত শ্রেণীবিভাগের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী মতানৈক্য রয়ে যায় সে ক্ষেত্রে পরবর্তীটির সিদ্ধান্ত প্রাধান্য পাবে। যদি কোনো ঋণ বা অগ্রিম এসএস এবং ডিএফ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়, তাহলে এই ধরনের ঋণের ওপর অর্জিত সুদ আয় অ্যাকাউন্টে জমা করার পরিবর্তে সুদের সাসপেন্স অ্যাকাউন্টে জমা করা হবে। কোনো ঋণ বা অগ্রিম বি/এল হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করার পরপরই, একই অ্যাকাউন্টে সুদের চার্জ করা বন্ধ হয়ে যাবে। অন্য কোনো বিশেষ কারণে কোনো বি/এল অ্যাকাউন্টে কোনো সুদ চার্জ করা হলে সুদের সাসপেন্স অ্যাকাউন্টে তা সংরক্ষণ করা হবে। পুনঃনির্ধারিত ঋণের ক্ষেত্রে অনাদায়ী সুদ, যদি থাকে, আয় অ্যাকাউন্টে জমা করার পরিবর্তে সুদের সাসপেন্স অ্যাকাউন্টে জমা করা হবে।
এই ধরনের ঋণ আদায় করার জন্য মামলা দায়ের করার ক্ষেত্রে আসল ও সুদের পরিমাণের জন্য মামলা দায়ের করা পর্যন্ত সময়ের জন্য সুদ নেওয়া যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে আরোপ করা সুদ সাসপেন্স অ্যাকাউন্টে সংরক্ষণ করতে হবে। যদি শ্রেণীবদ্ধ ঋণ বা এর কিছু অংশ আদায় হয় অর্থাৎ, প্রকৃত আমানত লোন অ্যাকাউন্টে কার্যকর থাকে, তাহলে প্রথমে সুদ (চার্জ করা হয়েছে ও চার্জ করা হয়নি) উল্লিখিত আমানত থেকে আদায় করতে হবে এবং মূল অর্থ পরে সমন্বয় করতে হবে।বাংলাদেশ ব্যাংক সাধারণ বিধানের ক্ষেত্রে, ব্যাংকগুলিকে এসটিডি-০, এসটিডি-১ এবং এসটিডি-২-এর জন্য বকেয়া ঋণের ১ শতাংশ এবং এসএসএ-এর জন্য ৫ শতাংশ রাখতে পরামর্শ দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দিষ্ট বিধানের ক্ষেত্রে, ব্যাঙ্কগুলিকে এসএস-এর বিধানের জন্য ২০ শতাংশ, ডিএফ-এর বিধানের জন্য ৫০ শতাংশ এবং বি/এল-এর বিধানের জন্য ১০০ শতাংশ ভিত্তি বজায় রাখতে পরামর্শ দিয়েছে। উল্লিখিত বিধানের হার ন্যূনতম, এবং ব্যংকগুলোকে অব্যাহতভাবে বিধিগুলোর মূল্যায়ন করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে যাতে নিশ্চিত করা যায় যে পৃথক করা বিধানগুলো সেগুলোর সম্ভাব্য ক্ষতির প্রতিফলন করে। বাংলাদেশ ব্যাংক আরও নির্দেশ দিয়েছে যে ইসলামি ব্যাংকগুলোকে অবশ্যই তাদের বিনিয়োগের জন্য এই ঋণ শ্রেণীবিভাগ এবং নীতি মেনে চলতে হবে। এই সার্কুলার ২০২৫ সালের ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ পালোয়ান রুহুল আমিন ঢালী (বীর মুক্তিযোদ্ধা)
যোগাযোগঃ মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন ঢালী কমপ্লেক্স, ২১৩/১ ( ৪র্থ তলা), শাহবাগ, ঢাকা- ১০০০
ফোনঃ ০২-৪৪৬১২০৩১, ৪৪৬১২০৩২
মোবাইলঃ ০১৮১৯২১১৩২৭, ০১৭৭৭১৮৯৯৫৯
Copyright © 2024 দৈনিক অগ্নিকন্ঠ. All rights reserved.