কিশোরগঞ্জের মাঠ জুড়ে এখন হলুদ সরিষা ফুল
- আপডেট সময় : ১১:৫৯:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫ ১ বার পড়া হয়েছে
যেনো হলুদ রঙের গালিচায় সেজেছে কিশোরগঞ্জের ফসলের মাঠ। সরিষা ফুলের মৌ-মৌ গন্ধে বিমোহিত ফসলের প্রান্তর। সরিষার এমন ফলনে কিষাণ-কিষাণির মুখে তৃপ্তির হাসি। জেলার ফসলের মাঠে মাঠে এখন হলুদ সরিষা ফুলের হাসি। এবারও জেলায় সরিষা ফসলের বাম্পার ফলনের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে মনে করছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার জেলার ১৩টি উপজেলায় মোট ১২ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। তারমধ্যে ১১ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে উফশী ও ১ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের সরিষা চাষ করা হয়েছে। জেলার সদর উপজেলায় ৪১৫ হেক্টর জমতি উফশী জাতের সরিষা চাষ করা হয়েছে। হোসেনপুর উপজেলায় ৩৫০ হেক্টর জমতি উফশী জাতের সরিষা চাষ করা হয়েছে।
পাকুন্দিয়া উপজেলায় ৫৭০ হেক্টর জমতি উফশী জাতের সরিষা চাষ করা হয়েছে। কটিয়াদী উপজেলায় ৩৬৫ হেক্টর জমতি উফশী জাতের সরিষা চাষ করা হয়েছে। করিমগঞ্জ উপজেলায় ২৬১০ হেক্টর জমিতে উফশী ও ৪৩ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের সরিষা চাষ করা হয়েছে। তাড়াইল উপজেলায় ৮৩৭ হেক্টর জমিতে উফশী ও ৫৫০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের সরিষা চাষ করা হয়েছে। ইটনা উপজেলায় ৫২০ হেক্টর জমতি উফশী জাতের সরিষা চাষ করা হয়েছে। মিঠামইন উপজেলায় ২৩০ হেক্টর জমতি উফশী জাতের সরিষা চাষ করা হয়েছে। নিকলী উপজেলায় ২৮০ হেক্টর জমতি উফশী জাতের সরিষা চাষ করা হয়েছে।
অষ্টগ্রাম উপজেলায় ২৬০ হেক্টর জমিতে উফশী ও ৫০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের সরিষা চাষ করা হয়েছে। বাজিতপুর উপজেলায় ১৭৫৫ হেক্টর জমিতে উফশী ও ২০৫ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের সরিষা চাষ করা হয়েছে। কুলিয়ারচর উপজেলায় ২৫৮ হেক্টর জমিতে উফশী ও ২ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের সরিষা চাষ করা হয়েছে। ভৈরব উপজেলায় ২৬৫০ হেক্টর জমিতে উফশী ও ২২০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের সরিষা চাষ করা হয়েছে। তাতে উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ হাজার মেট্রিক টনের উপরে।
জানা গেছে, জেলার হাওর, নদ-নদী চর-অধ্যুষিত এলাকাসহ খাল-বিল পাড়ে মাঠে মাঠে এখন সরিষা ফুলের হলুদ রঙের সমারোহ। চারদিকে হলুদ গালিচা বিছিয়ে যেনো অপরূপ সাজে সেজেছে ফসলের মাঠ। এ ফুলের মৌ-মৌ গন্ধ আর মৌমাছিদের গুঞ্জরণে মুখর হচ্ছে দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের প্রান্তর। এ নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে বাড়ছে প্রকৃতি প্রেমীদের আনাগোনা। প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ধানসহ অন্যান্য খাদ্যশস্য উৎপাদন করে ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এ অঞ্চলের কৃষকেরা অল্প সময়ে ও অল্প খরচে উৎপাদিত বেশি দামে বিক্রিয় যোগ্য ফসল সরিষা ব্যাপক হারে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ভোজ্য তেলের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে এ ফসলটির উপযুক্ত মূল্যও রয়েছে বাজারে।
প্রতি বছর কার্তিক মাসের শেষের দিকে চাষ হয় সরিষা ফসল। পৌষ মাসের মাঝামাঝি সময়ে এর কর্তন হয়। বিশেষ করে হাওরসহ জেলার অন্য উপজেলাগুলোতে বোরো ফসল কাটা শেষে নিম্নাঞ্চল জমিগুলো পানির নিচে তলিয়ে যায়। কার্তিক মাসের দিকে পানি সরে গেলে আরেকটি বোরো ফসলের মৌসুম শুরুর মাঝ সময়ে চাষ হয় তেলজাতীয় রবি ফসল সরিষা। এ জন্য চাষিরা এ ফসলটিকে ‘ফাউ’ ফসল হিসেবে গভীর মনোযোগ ও গুরুত্বের সঙ্গে চাষ করে থাকে।
এছাড়া বাজারে বিক্রির আগেও এ ফসলের ফুল দিয়ে মুখরোচক বড়া ও পাতা দিয়ে মজাদার শাক রান্না করা এবং কর্তন শেষে সরিষা গাছ শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার কারণে এসব বিক্রি করেও মেলে বাড়তি অর্থ।
বাজারে প্রচুর চাহিদা থাকায় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয় সরিষা। কৃষকরা ধানসহ অন্যান্য খাদ্যশস্যের উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় ব্যাপক হারে সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
আর তাই দেশের অন্যতম সরিষা ফসল উৎপাদনকারী হাওর-অধ্যুষিত কিশোরগঞ্জে জেলার ফসলের মাঠ জুড়ে এখন হলুদ সরিষা ফুল। যেদিকেই তাকানো যায়, মনে হয় হলুদ রঙের গালিচায় ছেয়ে আছে এখানকার মাঠঘাট- প্রান্তর। এ নয়নাভিরাম দৃশ্য ভিন্ন রকম দোলা দিয়ে যায় গ্রামবাংলার মানুষের মনে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, অর্šত্মর্বতী সময়ে নামমাত্র খরচে চাষ করে উপযুক্ত দাম পাওয়ায় কৃষকরা অধিক হারে সরিষা আবাদের দিকে ঝুঁকছেন।
তিনি আরও জানান, এ বছর জেলায় ১২ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ হাজার মেট্রিক টনের উপরে। তবে বাম্পার ফলনের আশা থাকায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের।