আসন্ন ইদুল আযহায় কুমিল্লা জেলায় কোরবানির জন্য পশুর কোনো সংকট নেই কেননা এখানে চাহিদা থেকে ২৩ হাজার ১৬৬ টি পশু বেশি রয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায় জেলার ১৭টি উপজেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮৬টি। অপরদিকে জেলায় কোরবানির জন্য গবাদি পশু রয়েছে দুই লাখ ৬০ হাজার ৭৫২টি যা দিয়ে জেলার পুরো চাহিদা মিটিয়েও উদ্বৃত্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা। এদিকে ভারতীয় গরু প্রবেশে প্রশাসনের কঠোরতা ও নানা পদক্ষেপে খুশি জেলার খামারিরা। ভারতীয় গরু প্রবেশ না করলে হাটে ন্যায্যমূল্য পাবেন বলে আশা করে করছেন তারা।

কোরবানির বাজারে ভালো দামের আশায় শেষ সময়ে পশুর যত্ন-পরিচর্যা বাড়িয়ে দিয়েছেন জেলার গৃহস্থ ও খামারিরা। অনেক খামারি ইতোমধ্যে গরু বিক্রিও শুরু করেছেন। চাহিদার তুলনায় বেশি পশু পালন করায় তারা জেলার বাইরে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পশু বিক্রি করছেন। যেহেতু তাদের উদ্বৃত্ত পশু রয়েছে তাই তারা আগেই দেশের অন্য এলাকায় তা সরবরাহ করার প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানান খামার ব্যবসায়ীরা। তবে এ বছর গো-খাদ্যের দাম সহনীয় হওয়ায় পশুর দাম বেশী বাড়বে না অর্থাৎ ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই থাকবে বলে জানান অনেক খামারি।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবার কোরবানির জন্য মোট গরু রয়েছে ১ লাখ ৯১ হাজার ৮২টি, মহিষ রয়েছে ৬০৮টি, ছাগল ৫৬ হাজার ৯৪০ টি, ভেড়া ১১ হাজার ৮০৫টি ও অন্যান্য পশু ৩১৭ টি।জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে আদর্শ সদর উপজেলায় ১৬ হাজার ৭৬৩টি পশু, চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় ১৩ হাজার ৩৯৯টি, বরুড়া উপজেলায় ২৩ হাজার ১২টি, লাকসাম উপজেলায় ৩৩ হাজার ৮৬৭টি, নাঙ্গলকোট উপজেলায় ২৭ হাজার ১৭৪টি, চান্দিনা উপজেলায় ১৫ হাজার ২১০টি, দাউদকান্দি উপজেলায় ৯ হাজার ২৫০টি, দেবিদ্বার উপজেলায় ১৪ হাজার ৮৪২টি, মুরাদনগর উপজেলায় ১৯ হাজার ৪৯টি, বুড়িচং উপজেলায় ৯ হাজার ৬৬৪ টি, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় আট হাজার ৭৬৪টি, হোমনা উপজেলায় ১৩ হাজার ৩৬২টি, মেঘনা উপজেলায় আট হাজার ৭২৭টি, তিতাস উপজেলায় ছয় হাজার ৮৭১টি, সদর দক্ষিণ উপজেলায় ৯ হাজার ৬৪৯টি, মনোহরগঞ্জ উপজেলায় ১১ হাজার ৯১১টি ও লালমাই উপজেলায় ১৯ হাজার ২৩৮টি কোরবানির গবাদিপশু রয়েছে।

যা জেলার প্রতিটি উপজেলার চাহিদার চেয়ে বেশি।নগরীর কালিয়াজুরি এলাকার নুর জাহান এগ্রোর মালিক মো. মনির হোসেন বলেন, ‘আমার খামারে ৫৮টি গরু পালন করেছি। এর মধ্যে ১০ টি কোরবানির জন্য বিক্রি করেছি। গেল বছরের চেয়ে এবার দাম তেমন বাড়েনি। গরুর খাদ্যের দাম সহনীয় থাকায় গরুর তেমন বেশি দাম রাখছি না। ভারত থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে গরু আশার শঙ্কা এবার নেই বলে জেলার খামারিরা এবার অনেকটা স্বস্তিতে আছেন বলে মনে করেন এই খামারি উদ্যোক্তা। কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার আগানগর বড়হাতুয়া এলাকায় অবস্থিত হানিফ অ্যাগ্রো এর স্বত্বাধিকারী মো. আবু হানিফ বলেন, ‘আমরা একটি বছর পশু পালন করে লাভের স্বপ্ন দেখি। আর চোরাইভাবে পশু এসে প্রতিবারই আমাদের সেই স্বপ্ন নষ্ট করে দেয়।

এবার অবৈধভাবে পশু প্রবেশ বন্ধে প্রশাসন তৎপর রয়েছে বলে আমরা অনেকটা লাভের আশা করছি। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার বাসসকে বলেন, এবার কুমিল্লায় কোরবানির চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত ২৩ হাজার ১৬৬ টি পশু রয়েছে, ফলে কোরবানির পশু নিয়ে জেলায় কারো কোন চিন্তা করতে হবে না। এ ছাড়া ঢাকাও চট্টগ্রামের মাঝামাঝি জেলা হিসাবে কুমিল্লার যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক ভালো, ফলে এই উদ্বুদ্ধ পশু জেলার চাহিদা মিটিয়েও অন্য জেলায় বিক্রি করা সম্ভব হবে। ফলে আশেপাশের জেলাগুলোতেও কোরবানির পশুর সংকট হবে না বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা। তিনি আরও বলেন, ‘কুমিল্লা সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় ভারত থেকে অবৈধভাবে যাতে কোনো পশু আসতে না পারে সেজন্য আমরা বিজিবি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সকল সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করছি। সবার কঠোর নজরদারির কারণে আশা করি ওই পাড়ের পশু আমাদের দেশে এবার আসতে পারবে না।

কুমিল্লা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খাঁন বাসসকে বলেন, ‘আর কিছুদিন পরেই কোরবানির ঈদ। কোরবানির পশুবাহীর ট্রাকসহ বিক্রেতাদের বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি ও হয়রানির শিকার যাতে না হতে হয় সেজন্য আমাদের বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে। গেল ঈদের মতো এবারও শান্তিপূর্ণভাবে মানুষ ঈদ উদ্যাপন করবে ইনশাআল্লাহ। কুমিল্লা ১০ বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্নেল মীর আলী এজাজ বলেন, ‘ভারতীয় গরু প্রবেশ সরকার নিষিদ্ধ করেছে। কুমিল্লা সীমান্ত এলাকা দিয়ে গরু একবারেই আসে না বললেই চলে। জেলার বেশিরভাগ সীমান্ত কাটা তারের বেড়া দেওয়া আছে। যে অংশ এখনও বেড়া হয়নি সেখানে আমরা নিয়মিত টহলের পাশাপাশি বাড়তি নজরদারিতে রাখছি। ভারতীয় পশু চোরাইভাবে যাতে প্রবেশ না করতে পারে সেজন্য আমরা জিরো টলারেন্সে আছি। বাসস