‘গাজা যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তি’ ঘোষিত
- আপডেট সময় : ১১:২৮:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫ ২ বার পড়া হয়েছে
ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে বুধবার যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তি চুক্তি ঘোষণা করেছে কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র। এই চুক্তি গাজা যুদ্ধের স্থায়ী অবসানের পথ প্রশস্ত করবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। কাতারের রাজধানী দোহা থেকে এএফপি এ খবর জানায়। কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান বিন জসিম আল-ছানি বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গাজা উপত্যকার যুদ্ধমান দুই গ্রুপ একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছেছে এবং রোববার থেকে এটি কার্যকর হবে।
‘আমরা আশা করি এটি হবে যুদ্ধের শেষ অধ্যায় এবং আমরা আরও আশা করি যে, সব পক্ষ এই চুক্তির সমস্ত শর্ত বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবে। এদিকে, বাইডেন এই আপস আলোচনাকে তার ক্যারিয়ারের কাজগুলোর মধ্যে ‘সবচেয়ে কঠিনতম’ অভিহিত করে বলেন, এই দিন এসেছে বলে তিনি অত্যন্ত সন্তুষ্ট।’ তিনি আরো বলেন, চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ চূড়ান্ত হলেই ‘যুদ্ধের স্থায়ী অবসান’ ঘটবে। চুক্তিটি বহাল থাকবে বলে তিনি আস্থা প্রকাশ করেন।
মধ্যস্থতাকারীরা একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে বলে জানানোর পর, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, ‘চূড়ান্ত বিবরণ’ নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। নেতানিয়াহুর কার্যালয় বুধবার জানায়, চুক্তিটি সুরক্ষিত করতে তাদের সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে নেতানিয়াহু কথা বলেছেন। ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হার্জোগ, এই চুক্তির ব্যাপারে মূলত আনুষ্ঠানিক ভূমিকা পালন করেন। তিনি বলেন, চুক্তিটি যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটনো ৭ অক্টোবর, ২০২৩ সালে হামাসের হামলার সময় আটককৃত জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার ‘সঠিক পদক্ষেপ’।
৭ অক্টোবরের হামাসের হামলা ছিল ইসরাইলের ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক। ইসরাইলি সরকারি হিসাব ভিত্তিক এএফপির পরিসংখ্যান অনুসারে, ওই হামলার ফলে, ১,২১০ জন নিহত হয়, যাদের বেশির ভাগই ছিল বেসামরিক নাগরিক, ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মতে সেদিন হামাস ২৫১ জনকে জিম্মি করে, যাদের ৯৪ জন এখনও গাজায় আটক রয়েছে এবং ৩৪ জন নিহত হয়েছে।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, পরবর্তীতে ইসরাইলের অবিরাম অভিযানে গাজার বেশিরভাগ এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে, সেখানে ৪৬,৭০৭ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। জাতিসংঘ এই পরিসংখ্যানকে নির্ভরযোগ্য বলে মনে করে। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, চুক্তি ঘোষণার পর ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ২০ জন নিহত হয়েছে। তেল আবিবে বিক্ষোভকারীরা চুক্তির খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে জিম্মি মুক্তির দাবি জানায়, অন্যদিকে গাজা জুড়ে হাজার হাজার মানুষ চুক্তিটি উদযাপন করছে।
গাজা নগরীর বাস্তুচ্যুত ৪৫ বছর বয়সী রান্ডা সামেহ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটছে। আমরা অনেক মানুষকে হারিয়েছি, আমরা সবকিছু হারিয়েছি। হামাস বলেছে , যুদ্ধবিরতি ‘আমাদের মহান ফিলিস্তিনি জনগণের কিংবদন্তি তুল্য দৃঢ়তা এবং গাজা উপত্যকায় আমাদের সাহসী প্রতিরোধের ফলাফল।’
সাম্প্রতিক দিনগুলোয় মধ্যস্থতাকারী কাতার, মিসর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি চুক্তিকে দৃঢ় করার প্রচেষ্টা জোরদার করার পাশাপাশি যুদ্ধবিরতি বন্ধ করার চাপ তীব্রতর হয়েছে। কাতারের শেখ মোহাম্মদ বলেছেন, তিনটি দেশ কায়রোতে অবস্থিত একটি সংস্থার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করবে। তিনি বলেন, প্রাথমিক ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতিতে ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। যাদের মধ্যে বেসামরিক নারী, শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ ও আহত ব্যক্তিরাও অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।
প্রথম পর্যায়ে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে প্রত্যাহার করবে পাশাপাশি যার বিনিময়ের বাস্তুচ্যুত মানুষদের তাদের বাসস্থানে ফিরিয়ে আনা হবে। তিনি বলেন, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে ইসরাইলি জিম্মিদের বিনিময়ে মুক্তি দেওয়া ফিলিস্তিনি বন্দীদের সংখ্যা প্রাথমিক ৪২ দিনের মধ্যে ‘চূড়ান্ত’ করা হবে।