চীনের ‘ওয়ান স্ক্রিন সিটি ৩৬০ ডিগ্রি’ নগর ব্যবস্থাপনার নতুন সমাধান
- আপডেট সময় : ১১:২৩:৪১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ০ বার পড়া হয়েছে
এমন একটি শহরের কথা কল্পনা করুন যেখানে যানজট, আবাসন সমস্যা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, দূষণ নিয়ন্ত্রণ, এমনকি অপরাধ প্রতিরোধ একটি মাত্র ব্যবস্থায় নির্বিঘ্নে পরিচালিত হয়।এই স্বপ্ন এখন আর ভবিষ্যৎ কল্পনা নয় বরং বাস্তবতা। হুয়াওয়ের যুগান্তকারী ‘ওয়ান স্ক্রিন সিটি ৩৬০ ডিগ্রি’ এ সমাধান দিচ্ছে। বেইজিংয়ে হুয়াওয়ের এক্সিকিউটিভ ব্রিফিং সেন্টারে সাম্প্রতিক সফরের সময় বাসস প্রতিনিধিসহ বাংলাদেশী সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দল এই উদ্ভাবনী ব্যবস্থাটি সম্পর্কে সম্যক পরিচয় লাভ করেছেন। চীনা এই প্রযুক্তি নগর ব্যবস্থাপনাকে একীভূত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়েছে। নগরগুলি আরও জটিল হওয়ার সাথে সাথে হুয়াওয়ের স্মার্ট সিটি সমাধান প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে নগর ব্যবস্থাপনাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করেছে যা জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ, আরও দক্ষ ও ভবিষ্যতের জন্য টেকসই করবে।
সড়কের ডিভাইস, আবাসিক এলাকা, নাগরিক ও স্টেকহোল্ডারদের ডেটা বিশ্লেষণ করে, এই প্ল্যাটফর্ম নগর ব্যবস্থাপনায় তাৎক্ষণিক সমাধান প্রদান করে। বিশ্বব্যাপী প্রায় ৭০০টি শহরে ইতিমধ্যেই গৃহীত এই প্ল্যাটফর্মটি বিভিন্ন সরকারি পদক্ষেপে কম্পিউটিং, বিশ্লেষণ ও ডিজিটাল পরিষেবা সরবরাহ দিচ্ছে যা ভিডিও বিশ্লেষণ, রিয়েল-টাইম ম্যাপিং ও জনসাধারণের অভিযোগের দ্রুত সমাধানের মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ সমাধান প্রদান করে। হুয়াওয়ের একজন মুখপাত্র জানান, ‘একটি চীনা শহরে, এই সিস্টেমটি নাগরিকদের অভিযোগে সাড়া দিতে গড়ে চার মিনিট থেকে এখন মাত্র ৫০ সেকেন্ড সময় নিচ্ছে। তিনি বলেন, স্মার্ট সিটিতে দীর্ঘ সময় ধরে পরিচালনা করার প্রয়োজন হয়। তাই নগরীর সকল ব্যবস্থা পরিচালনা করতে ও উদ্ভাবনী উপায়ে প্রয়োগ করা প্রযুক্তিগুলিকে সক্ষম করার জন্য পরিচালনা সহায়ক পরিষেবা ব্যবস্থা স্থাপন করতে হবে।
তিনি বলেন, প্রযুক্তির বিকাশের সাথে, সফ্টওয়্যার ও হার্ডওয়্যার দ্রুত বদলে যাচ্ছে যা অনেক সমস্যা নিয়ে আসে, যেমন পুরানো ডিজাইন, সিস্টেমের অসঙ্গতি, বা অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং আপগ্রেডের নানা অসুবিধা। এই বছর স্পেনে নতুন প্রজন্মের স্মার্ট সিটি সলিউশন শেয়ার করার সময়, হুয়াওয়ের সরকারি পাবলিক সার্ভিস ডিজিটালাইজেশন বিইউ’র প্রধান কর্মকর্তা ঝু হংকুয়ান বলেছেন, এই সমাধান স্মার্ট সিটির টেকসই উন্নয়নের জন্য নগরীর পরিচালকদের অপারেশন দক্ষতা অপ্টিমাইজ করতে সাহায্য করে, বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে ও সহায়তা প্রদান করে। তিনি বলেন, দক্ষ নগর শাসন ব্যবস্থা অর্জন ও নগরীর বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থার ব্যবহার বাড়াতে নতুন ডিজিটাল অবকাঠামো নির্মাণের জন্য হুয়াওয়ে বিশ্বব্যাপী অংশীদারদের সাথে কাজ করে।
হুয়াওয়ে ১৯৮৭ সালে যাত্রা শুরু করেছিল। আজ, এটি একটি বৈশ্বিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে। শুধুমাত্র ২০২৩ সালে তারা গবেষণা ও উন্নয়নে ১৬৪.৭ বিলিয়ন ইউয়ান বিনিয়োগ করেছে। ২ লাখের বেশি কর্মীর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি গবেষণায় নিযুক্ত রয়েছে যা হুয়াওয়ের উদ্ভাবনে সাফল্য নিয়ে আসছে। স্মার্টফোন ও টেলিকম প্রযুক্তির জন্য সুপরিচিত হুয়াওয়ের বিভিন্ন কার্যক্রম অবকাঠামো, ইলেকট্রনিক্স, ক্লাউড কম্পিউটিং, ডিজিটাল পাওয়ার এবং স্বয়ংচালিত সমাধান দিতে অবদান রাখছে। হুয়াওয়ে ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। সৌর-শক্তির ব্যবহার প্রবর্তনে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং সম্প্রতি টেলিকম বেস ট্রান্সসিভার স্টেশন (বিটিএস) এর জন্য লিথিয়াম ব্যাটারি তৈরি করতে বাংলাদেশের স্থানীয় ব্র্যান্ড ওয়ালটনের সাথে অংশীদারিত্ব করেছে। এই সহযোগিতার মধ্যে রয়েছে প্রযুক্তিগত সহায়তা, নকশার দক্ষতা, এবং স্থানীয় উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সামগ্রী প্রদান।
ডিজিটাল ক্ষেত্রে, হুয়াওয়ে বাংলাদেশের প্রথম ই-গভর্নমেন্ট ক্লাউড উদ্যোগের নেতৃত্ব দিয়েছে, ৫০ টিরও বেশি কোম্পানিকে ক্লাউড পরিষেবা প্রদান করেছে। প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটিং, এআই এবং ক্লাউড পরিষেবার মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আনতে বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন নেটওয়ার্ক (বিডিআরইএন)-এর সাথে অংশীদারিত্ব করেছে। হুয়াওয়ের অবদান পরিবহন খাতেও প্রসারিত। ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোরে হুয়াওয়ের ‘স্মার্ট হাইওয়ে’ প্রকল্পটি লাইসেন্স প্লেট শনাক্তকরণ, স্বয়ংক্রিয় নম্বর প্লেট সনাক্তকরণ এবং ট্রাফিক নিয়ম লঙ্ঘন পর্যবেক্ষণের মতো ব্যবস্থা উন্নত করতে সহায়তা দিচ্ছে। এসব উদ্ভাবনী ব্যবস্থা হাইওয়ে নিরাপত্তা বাড়ায়, পুলিশ কন্ট্রোল রুমে রিয়েল-টাইম সতর্কতা সক্ষমতা তৈরি করে এবং সিসিটিভির মাধ্যমে ক্রমাগত মনিটরিং করে। এই ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে, হুয়াওয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।