দীর্ঘকাল অনির্বাচিত সরকার থাকা উচিত নয় : মির্জা ফখরুল
- আপডেট সময় : ১০:৪৭:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সময়, পরিবেশ এবং সার্বিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে দীর্ঘকাল অনির্বাচিত সরকার থাকা উচিত নয়। আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, স্বাধীনতার ঘোষক, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ করে সব ধরনের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা রাষ্ট্রের সংস্কারের জন্য কয়েকটি কমিশন করেছেন, কমিশন কাজ করছে ভালো কথা। এই কমিশন কাদের সঙ্গে কাজ করছে? তারা কয়েকজন পন্ডিত ব্যক্তিকে নিয়ে এসেছেন আমরা তাদেরকে ভালো করে চিনি, সম্মান করি। কিন্তু একইসঙ্গে জনগণের কাছে যান তারা কি চায় জানুন। বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা বলেছি, আপনারা সংস্কার করেন, আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যে বিষয়টা নিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে, সেটা হচ্ছে- দেশে এখন এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। অস্থিতিশীলতা রয়েছে, ফলে মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এই সমস্যাগুলো অনেক কমে যাবে যদি একটা নির্বাচিত সরকার থাকে।
নির্বাচিত সরকারের শক্তি অনেক বেশি, কারণের পেছনে জনগণ থাকে। এই কথাটা আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে। আমরা সংস্কার চাই, আমরা সংস্কার বেশি করেই চাই। কিন্তু আমরা এটাও চাই, দীর্ঘকাল অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা থাকা উচিত নয়। জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাগপার সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধ খন্দকার লুৎফর রহমান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার।বিএনপির মহাসচিব বলেন, বর্তমানে দেশের সংকট বাড়ছে তো বাড়ছেই।
সবচেয়ে বড় সংকট সাধারণ মানুষের চালের দাম এমনভাবে বেড়েছে যে, তাদের পক্ষে চাল কেনাও কঠিন হয়ে পড়েছে। চাল, ডাল, তেল, লবণ, ডিম, মুরগি প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। এতে সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘এসব সমস্যার দিকে কোনো খেয়াল নেই। দ্রব্যমূল্য কমানোর জন্য কেউ কাজ করছেন না। কিছু বললে, বলেন, এত তাড়াতাড়ি সম্ভব না। কিন্তু আমরা উদ্যোগটা দেখতে চাই, কি কি ব্যবস্থা নিয়েছে সেটা দেখতে চাই। আমরা তো দেখলাম না, যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন তারা বাজারে গিয়ে একটু জিজ্ঞাসা করছেন, মানুষকে বুঝার চেষ্টা করছেন, আসলে সমস্যাটা কোথায়?
ভোটার হওয়ার ন্যুনতম বয়সসীমা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া বক্তব্যে ‘জনমনে বির্তক সৃষ্টি হয়েছে’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘পত্রিকায় দেখলাম, প্রধান উপদেষ্ঠা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নতুন একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। সেই প্রস্তাব হচ্ছে- ভোটার হওয়ার জন্য ন্যুনতম বয়সসীমা ১৭ বছর। তিনি প্রশ্নোচ্ছলে বলেন, এখন তা হলে কি করতে হবে, নতুন করে আবার ভোটার তালিকা তৈরি করতে হবে! মির্জা ফখরুল বলেন, আমি মনে করি যে, এই বিষয়টাকে এভাবে না বলে বরং স্বার্থ-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে তারপর বিষয়টা আনতে পারলে ভালো হতো। কোনো বির্তকের সৃষ্টি হতো না।
এখন আরও বেশি করে মানুষ আশাহত হয়ে যাবে, কারণ এটা করতে গিয়ে আরও সময় যাবে, আরও সময়ক্ষেপণ হবে, আরও বিলম্ব হবে। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই জিনিসটা (ভোটার তালিকার ন্যুনতম বয়সমীমা নির্ধারণ) তো নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার। ইউ আর দ্যা চীফ এক্সিকিউটিভ। আপনার (প্রধান উপদেষ্টা) প্রথমেই বলে দিচ্ছেন যে, ১৭ বছর হলে ভালো। আপনি যখন বলছেন, তখন দ্যাট বিকামস বাইন্ডিং অন দ্যা ইলেকশন কমিশন, যেটা ইলেকশন কমিশন ঠিক করবে। এই বিষয়টা ইলেকশন কমিশনকে ছেড়ে দিন। দ্যাট দ্যা ডিসাইড ১৮ বছর তো আছে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
তিনি বলেন, ‘ভোটার হওয়ার বয়সসীমা যদি এক বছর কমাতে চান তাহলে সেটা ইলেকশন কমিশন প্রস্তাব করুক যারা নতুন হয়েছে। কিন্তু তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) যখন প্রথমেই বলে দেন তখন এটা একটা চাপ তৈরি হয় ইলেকশন কমিশনের জন্য। বিএনপির মহাসচিব একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তার দলের পূর্ণ সমর্থনের কথাও পূনর্ব্যক্ত করে বলেন, আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি, থাকব। তবে যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। জনগণের সরকারের কাছে ক্ষমতা দিলেই সকল সংকটের সমাধান হবে।