ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, দেশে সরকারি ক্রয়খাত নিয়ন্ত্রণহীন দখলদারিত্বের হাতে জিম্মি দশায় নিমজ্জিত। বাংলাদেশের ই-ক্রয়কার্য: একচ্ছত্র বাজার, যোগসাজশ ও রাজনৈতিক প্রভাব’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে ইফতেখারুজ্জামান ২০১৮ সালে টিআইবির করা একটি গবেষণার উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, আমরা দেখেছি, প্রাতিষ্ঠানিক ক্রয়খাতের দুর্নীতি-অনিয়মের জন্য মোট ক্রয় বাজেটের ২৭ শতাংশ পর্যন্ত অপচয় হয়। প্রত্যাশা ছিল, ই-জিপি ব্যবস্থার মাধ্যমে এই ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে, উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা হবে, সরকারি ক্রয়খাতে দুর্নীতি কমবে এবং ব্যয়িত অর্থের সর্বোচ্চ সুফল পাওয়া যাবে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হল ই-জিপির মাধ্যমে ডিজিটাইজেশন করা হলেও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি, উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা যায়নি। বিগত সরকারের সময়ে ইলেক্ট্রনিক ক্রয় ব্যবস্থাকেও কুক্ষিগত করে আমলাতন্ত্র, ঠিকাদার এবং রাজনৈতিক শক্তির ত্রিপক্ষীয় আঁতাতে সরকারি ক্রয়ের বাজার দখলের চেষ্টা করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে ২০১২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ৫ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি সরকারি ক্রয়খাতে ব্যয় করেছে শীর্ষ ১০টি মন্ত্রণালয়। যার সিংহভাগ-৬১ শতাংশ কার্যাদেশ পেয়েছে শীর্ষ ৫ শতাংশ ঠিকাদার। মন্ত্রণালয়ভিত্তিক এই কার্যাদেশ প্রাপ্তির হার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৭৪ শতাংশ অতিক্রম করেছে। অর্থাৎ এখানে বাজারের বিশাল অংশ প্রভাবশালী ঠিকাদারদের দখলে।দ্বিতীয়ত, একক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি প্রভাবশালী ঠিকাদার চক্র নীতিমালার ফাঁকফোকর ব্যবহার করে যৌথ অংশীদারত্ব বা জয়েন্ট ভেঞ্চারের মাধ্যমে কার্যাদেশ নেওয়ার সুযোগকে একই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার পথ রুদ্ধ করেছে ও দখলদারিত্ব আরো ঘনীভূত করেছে।
আবার ই-জিপি কর্তৃপক্ষের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, মন্ত্রণালয় বা সরকারি সংস্থার নেতৃত্বের পরিবর্তন হলে শীর্ষ কার্যাদেশগুলো হাত বদল হয়েছে, কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত থেকেছে। যা ক্রয়খাতে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের অকাট্য প্রমাণ। টিআইবি নির্বাহী পরিচালক আরো বলেন, ‘কর্তৃত্ববাদ পরবর্তী রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রেক্ষিতে একই অবস্থা অব্যাহত থাকবে কি-না- এ প্রশ্নের উত্তর সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি এবং ই-জিপি প্রক্রিয়ার যুগোপযোগী সংস্কারের ওপর নির্ভর করবে। তবে এ ক্ষেত্রে বাস্তব সুফল অর্জন রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও চর্চায় ইতিবাচক পরিবর্তন ছাড়া অসম্ভব।
গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নের জবাবে গবেষণা দলের প্রধান ও টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ই-জিপি সংশ্লিষ্ট বিদ্যমান আইনের অপপ্রয়োগ করে অনিয়মকে বৈধতা দেয়া হচ্ছে, বিশেষত জয়েন্ট ভেঞ্চারের মাধ্যমে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার পরিবেশ ধ্বংস করা হয়েছে। ই-জিপি প্রবর্তনের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল প্রতিযোগিতা বাড়ানো, কিন্তু সে চিত্র আমরা দেখছি না বরং আইনের ঘাটতিকে পুঁজি করে বাজার দখলের চর্চা অব্যাহত আছে বলেই আমরা মনে করি এই দুর্বল আইনের সংস্কার প্রয়োজন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বেশকিছু সুপারিশ করেছে টিআইবি। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটিতে (বিপিপিএ) কর্তৃক জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা।
যাতে যোগসাজশের মাধ্যমে বাজার দখলে সুযোগ না থাকে। সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে বিপিপিএ কর্তৃক প্রতিযোগিতামূলক আইন প্রণয়ন করা এবং জয়েন্ট ভেঞ্চারের কার্যক্রম সীমিতকরণ, মার্কেট শেয়ারের ক্ষেত্রে একক ঠিকাদার ও জয়েন্ট ভেঞ্চারের একটি সীমারেখা নির্ধারণ করা, যাতে সকলে সমান সুযোগ পায়। বিপিপিএসহ ক্রয়কার্যক্রমে জড়িত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তর্জাতিক ভাল চর্চাগুলো বজায় রাখা এবং বাজারে একচ্ছত্র বাজার ব্যবস্থার বদলে প্রতিযোগিতমূলক পরিবেশ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখা, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট নীতিমালা সংশোধন করা, যেন প্রতিষ্ঠান ও জয়েন্ট ভেঞ্চারের বেনিফিসিয়াল ওনারশিপের তথ্য সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকে এবং যে চুক্তিগুলো ই-প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়ায় হয়নি সেগুলোকে দ্রুত ই-টেন্ডারিং প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসা।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ পালোয়ান রুহুল আমিন ঢালী (বীর মুক্তিযোদ্ধা)
যোগাযোগঃ মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন ঢালী কমপ্লেক্স, ২১৩/১ ( ৪র্থ তলা), শাহবাগ, ঢাকা- ১০০০
ফোনঃ ০২-৪৪৬১২০৩১, ৪৪৬১২০৩২
মোবাইলঃ ০১৮১৯২১১৩২৭, ০১৭৭৭১৮৯৯৫৯
Copyright © 2025 দৈনিক অগ্নিকন্ঠ. All rights reserved.