বগুড়া জেলায় শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে কদর বেড়েছে খেজুর রসের। গাছ থেকে রস সংগ্রহ, গুড় তৈরি করে শীতকালীন পিঠা তৈরির ধুম পড়ে গেছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় খেজুর গাছের রস সংগ্রহের জন্য গাছিরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাছ প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
জানা যায়, আবহমান কাল থেকেই গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে শীতের আমেজের সঙ্গে মিসে আছে খেজুরের রস। শীতের আগমনে চলতি মৌসুমে জেলার বিভিন্ন উপজেলা গুলোতে খেঁজুরগাছ পরিচর্যা শুরু করেছেন গাছিরা। গাছিরা বছরজুরে অন্য পেশায় নিয়োজিত থাকলেও শীতের আগমনে খেজুরগাছের রস সংগ্রহে ব্যস্ততায় দিন কাটে তাদের। প্রতিবছরে ন্যায় এ বছরও মৌসুমী গাছিরা কোমরের দড়ি বেঁধে খেজুরগাছে ওঠে তাদের নিপুন হাতে গাছের মাথার কিছু নিচে একটি অংশে চেঁচে নিয়ে রস সংগ্রহের ব্যবস্থা করেন।
ধারালো দা দিয়ে খেজুর গাছের সোনালী অংশ বের করা হয়, যাকে বলে চাঁচ দেওয়া। পরে একটি হাড়ি লাগিয়ে রস সংগ্রহ করা হয়। জেলাজুড়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন এবং সরকারী অসংখ্য খেজুর গাছ রয়েছে। এ অঞ্চলের প্রত্যেকটি গাছ থেকে ৩ থেকে ৪ লিটার পর্যন্ত রস সংগ্রহ সম্ভব হয়। শীত যত বাড়বে খেজুরের রসের স্বাদ ততই বাড়ে।
বগুড়ায় খেজুরের রস থেকে তৈরীকৃত পাটারী গুড় ও দানা গুড় দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়ে থাকে। দেশজুড়ে খেজুর গুড়ের চাহিদা বেশি থাকায় গাছিদের বাড়ি থেকেই পাইকারী গুড় বিক্রয় করে সময় ও অর্থ দুটোই লাভবান হন এই অঞ্চলের গাছিরা।
তবে গাছিদের অভিযোগ খেজুর গুড় সংরক্ষণের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় বেশি দিন বাড়িতে রাখা যায় না। এছাড়া, আবহমান কাল থেকে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে মানুষদের শীতের সকালের নাস্তাতে রসের সাথে মুড়ি খাওয়ার প্রচলন রয়েছে দীর্ঘকাল থেকে।
শীতকালীন পিঠাপুলি, পায়েসসহ রকমারি খাবার তৈরীতে রস ও খেজুরগুড়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। খেজুরের রসের পায়েস, পিঠে, পুলি, ক্ষীর, সন্দেশ, ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, দুধ পিঠাসহ হরেক রকমের বাহারি পিঠা তৈরি করা হয়।
গ্রাম বাংলায় খেজুর রসের যে কোন মজাদার পিঠা তৈরীতে কদর রয়েছে আজও। নতুন ধানের চাল দিয়ে খেজুর রসের যে কোন পিঠা তৈরি করতে গ্রামীণ বধুরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এছাড়া রসের ফলন ও বাজারে চাহিদা থাকার উপর নির্ভর করে খেজুর গুড়ের মূল্য।
এ অঞ্চলের গাছিরা বলছেন, গত কয়েক বছর আগে যে পরিমান খেজুর গাছ ছিল বর্তমানে তার অর্ধেকে নেমে এসেছে। কার্তিক মাসে খেজুর গাছ প্রস্তুত করা হয় আর খেজুরের রস আহরন করা হয় অগ্রহায়ন মাস থেকে মাঘ মাস পর্যন্ত। সেই রস থেকে পাতলা লালি গুড়, পাটারি ও দানাদার গুড় তৈরী করে বাজারজাত করা হয়। কিছু কিছু এলাকায় কার্তিক মাসের শেষ দিক থেকেও খেজুর রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলার থালতামাঝ গ্রামের গাছি আশরাফ আলী জানান, অনেক বছর ধরে তিনি এ কাজ করেন। চলতি মৌসুমে অল্প কিছু গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত করেছেন। তবে সব গাছ তার একার না। চুক্তিতে অন্যের গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে থাকেন। এ বছর শীত একটু দেরিতে পড়ায় দেরিতেই রস সংগ্রহের কাজ শুরু করতে হচ্ছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে পর্যাপ্ত পরিমাণে গুড় উৎপাদন সম্ভব।
জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান ফরিদ জানান, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় খেজুর গাছের গুরুত্ব অপরিসীম। তাছাড়া খেজুরের রস ও গুড় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে খেজুর গাছের সঠিক পরিচর্যা করা হলে তা থেকে বাণিজ্যিকভাবে আয় করা সম্ভব।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ পালোয়ান রুহুল আমিন ঢালী (বীর মুক্তিযোদ্ধা)
যোগাযোগঃ মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন ঢালী কমপ্লেক্স, ২১৩/১ ( ৪র্থ তলা), শাহবাগ, ঢাকা- ১০০০
ফোনঃ ০২-৪৪৬১২০৩১, ৪৪৬১২০৩২
মোবাইলঃ ০১৮১৯২১১৩২৭, ০১৭৭৭১৮৯৯৫৯
Copyright © 2024 দৈনিক অগ্নিকন্ঠ. All rights reserved.