বিএনপি জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চায় : মির্জা আব্বাস
- আপডেট সময় : ১১:১২:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ৫ বার পড়া হয়েছে
জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন,‘বিএনপি নির্বাচন চায়,ভোটাধিকার চায়। জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চায় জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে। তিনি বলেন, বিএনপির ভাবনা জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার বিষয়ে। ১৭ বছরের আন্দোলন কাজে লাগেনি এটা বলা ভুল। ভবন নির্মাণের সময় নিচ থেকেই শুরু হয়, ওপর থেকে নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনও তেমনভাবে হয়েছে। অনেকে অনেক কিছু বলছেন, যা ঠিক নয়। আজ রোববার রাজধানীতে আনন্দ কমিউনিটি সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।
যথাসময়ে নির্বাচনের দাবির কথা পুনরুল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই, সংস্কারের কথা বলছেন-করেন, যতটুকু লাগে করেন, আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যথাসময়ে দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচন দেবেন। বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, হাসিনা চলে গেলেও তার প্রেত্মাতারা সব রয়ে গেছে। সবচেয়ে আশ্বর্যজনক বিষয় হলো এতো বিরোধিতার পরও মাত্র দুই-তিনদিন আগে সচিবালয়ে আরেকজন প্রাক্তন বাকশালী সচিবকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এখন বাকশালীদের প্রেত্মাতাকে বগলধাবা করে নিয়ে আপনারা কি সংস্কার করবেন জাতির কাছে প্রশ্ন জাগে? আমার কাছেও প্রশ্ন জাগে? আমরা কি আওয়ামী লীগকে আবার ফিরিয়ে আনার রাস্তা করে দিচ্ছি?
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগের দোসরদের মন্ত্রণালয়ে রেখে এই যে সচিবালয়ে কয়েকদিন আগে আগুন লেগেছে, এর আগে চট্টগ্রাম সি-পোর্টে মালবহনকারী বার্জে আগুন লেগেছিল, আনসার বিদ্রোহ হলো আরও কত কিছু হবে। এত কিছু হওয়ার সুযোগ কেনো আমরা দিচ্ছি এবং দেবো কেনো?’তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, এই যে আগুন (সচিবালয়ে), এই যে বিদ্রোহ (আনসার বিদ্রোহ) ঘটনাগুলো খামখা ঘটছে না। কেউ না কেউ উসকানি দিচ্ছে এবং তারা সচিবালয়েই বসে আছেন; সবাইকে কিন্তু আমরা চিনি। সংবিধান কবর দেওয়ার কথায় কষ্ট লাগে উল্লেখ করে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধে ফ্রন্ট লাইনে অংশগ্রহণ করেছি। সামনা-সামনি, আমার সামনে বহু সহকর্মী মারা গেছে।
শহিদের রক্তের ওপর দিয়ে লেখা যে সংবিধান সেই সংবিধানকে যখন কবর দেওয়ার কথা বলা হয় তখন কিন্তু আমাদের কষ্ট লাগে। তবে এই সংবিধানে যদি খারাপ কিছু থাকে নিশ্চয়ই সেটা বাতিলযোগ্য। মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমাদের সন্তানরা যারা (সংবিধানের কবর দেওয়া হবে) এই ঘোষণা দিয়েছে; তাদের বলব এ ধরনের কথাগুলো ফ্যাসিবাদের মুখ দিয়ে আসে। কবর দিয়ে দেবো, মেরে ফেলবো, কেটে ফেলবো, ছিঁড়ে ফেলবো এই সমস্ত কথা ভালো কথা নয়। কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করবেন। ভুল বুঝবেন না। জাতি তাকিয়ে আছে আপনাদের দিকে, আমরাও তাকিয়ে আছি আপনাদের দিকে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আওয়ামী লীগকে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা ও মুজিববাদী ৭২’র সংবিধানকে কবর দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
এ প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘সিনিয়রদের সঙ্গে কথা না বলে এভাবে ওদের (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী) একথা বলা কি ঠিক হলো? তিনি বলেন, ‘আমি ’৭২ সালের সংবিধানের সমর্থক নই, আমি একাত্তর সালের সংবিধানের মুক্তিযুদ্ধের রক্তের সমর্থক। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বলেই এই সংবিধান, যদি মুক্তিযুদ্ধটা একাত্তরের আগেই অর্থাৎ একাত্তরের প্রথম দিকে শেষ হয়ে যেতো তাহলে ৭১ সালের সংবিধান বলা হতো’। ভারতের প্রসঙ্গে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, আমাদের দেশের পাশে ভালো প্রতিবেশী নেই। আমাদের পাশে যারা আছে তারা কখনো বাংলাদেশকে স্থির থাকতে দিতে চায় না।
তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমরা সুযোগ দিতে চাই না, সুযোগ দেবো না। আজকে বাংলাদেশ নিয়ে কত কথা বলছে, কেউ চট্টগ্রাম নিয়ে যায়, কেউ লারমনিরহাট নিয়ে যায়, যেন হরিলুটের মাল বাংলাদেশ। না এখন আর এটা সম্ভব না।ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বাযক রফিকুল আলম মজনুর সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, নির্বাহী কমিটি সদস্য কাজী আবুল বাশার, মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমিনুল হক, সদস্যসচিব মোস্তফা জামান, চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফার নুরুদ্দিন আহমেদ, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি বাছির জামাল, সাংবাদিক কামরুজ্জামান রাজিব, মহসিন হোসেন, নাজিয়া আফরিন, আহমেদ সালেহীন, রেজা করীম, বাবুল তালুকদার, মো. মহসিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মহানগর দক্ষিণের হারুনুর রশিদ হারুন, লিটন মাহমুদ, আনম সাইফুল ইসলাম, মনির হোসেন চেয়ারম্যান, সাইদুর রহমান মিন্টু, আব্দুস সাত্তার, মীর হোসেন মীরু, ফরিদ উদ্দিন, ফারুকুল ইসলাম, শরীফ হোসেন, আরিফা সুলতানা রুমা প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।