বিশ্বে প্রথমবার বেইজিংয়ে হাফ ম্যারাথনে অংশ নিল দু-পেয়ে রোবট

- আপডেট সময় : ১২:২৮:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫ ২ বার পড়া হয়েছে

হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে পা মিলিয়ে যন্ত্রচালিত পা ফেলে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো হাফ ম্যারাথনে অংশ নিয়ে এগিয়ে চলল মানব-সদৃশ ডজনখানেক দু-পেয়ে রোবট-শনিবার ভোরে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের রাস্তায় এমনই অভিনব দৃশ্যের জন্ম হলো। এ আয়োজন চীনের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির এক সাহসী প্রদর্শন। বেইজিং থেকে এএফপি জানায়, ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই দৌড় অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত হাই-টেক শিল্পাঞ্চল ই-টাউন এলাকায়। এর মূল লক্ষ্য ছিল বাস্তব পরিবেশে দুই পায়ে চলা রোবটগুলোর সক্ষমতা যাচাই করা।
স্টার্টারের গুলির শব্দে যখন দৌড় শুরু হয়, তখন পেছনে বেজে চলেছে চীনা পপ গান ‘আই বিলিভ’। রোবটগুলো একে একে সারিবদ্ধভাবে হাঁটা শুরু করে। সাধারণ দৌড়বিদরাও রাস্তায় সারিবদ্ধ হয়ে মোবাইল ক্যামেরা নিয়ে প্রস্তুত ছিল এই অভিনব দৃশ্য ধারণে।একটি ছোট আকৃতির রোবট পড়ে গিয়ে কিছুক্ষণ মাটিতে শুয়ে ছিল, পরে নিজেই উঠে দাঁড়ালে উপস্থিত দর্শকরা করতালি দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। দেখতে ট্রান্সফরমারের মতো এবং প্রপেলার-চালিত অন্য একটি রোবট শুরুতেই রেলিংয়ে ধাক্কা খেয়ে এক প্রকৌশলীর ওপরে পড়ে যায়।
ই-টাউনের ব্যবস্থাপনা কমিটির উপ-পরিচালক লিয়াং লিয়াং বলেন, ‘মানুষের কাছে এটি হয়তো ছোট এক কদম, কিন্তু হিউম্যানয়েড রোবটের কাছে এটি এক বিশাল লাফ। রোবটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দৌড়ান প্রকৌশলীরাও। তিনি জানান, এই আয়োজনের লক্ষ্য রোবটের শিল্পায়নের পথে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। প্রযুক্তির দৌড়চীনের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রায় ২০টি দল এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। অংশগ্রহণকারী রোবটগুলোর উচ্চতা ছিল ৭৫ থেকে ১৮০ সেন্টিমিটার এবং ওজন সর্বোচ্চ ৮৮ কেজি পর্যন্ত। প্রতিযোগিতায় কিছু রোবট স্বয়ংক্রিয়ভাবে দৌড়েছে, আবার কিছু পরিচালিত হয়েছে প্রকৌশলীদের রিমোট নিয়ন্ত্রণে।
মানুষের ও রোবটের জন্য আলাদা ট্র্যাক নির্ধারিত ছিল। প্রকৌশলীরা জানান, লক্ষ্য ছিল রোবটের কর্মক্ষমতা ও নির্ভরযোগ্যতা যাচাই-কে আগে শেষ করল, সেটা নয়।নোয়েটিক্স রোবটিকসের ২৮ বছর বয়সী প্রকৌশলী ছুই ওয়েনহাও বলেন, আমার মনে হয় এটি পুরো রোবটিকস শিল্পের জন্য এক বিশাল উৎসাহ। তিনি জানান, একটি রোবট প্রতিদিনই হাফ ম্যারাথন অনুশীলন করেছে-প্রতি কিলোমিটার সাত মিনিটে দৌড়ে। তবু আমরা একটি ব্যাকআপ রোবটও প্রস্তুত রেখেছি,-বলেন তিনি।
আরেক তরুণ প্রকৌশলী কং ইচ্যাং (২৫), ড্রয়েডআপ কোম্পানি থেকে, বলেন, এই আয়োজন ভবিষ্যতের রোবট-সম্পৃক্ত কার্যক্রমের ভিত্তি রচনা করবে। এর মাধ্যমে রোবটেরা সত্যিকার অর্থেই মানব সমাজে একীভূত হওয়ার পথে এগিয়ে যাবে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবট প্রযুক্তিতে নেতৃত্ব নেওয়ার লক্ষ্যে বহুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। গত জানুয়ারিতে ডিপসিক নামের এক চীনা স্টার্টআপ দাবি করে, তারা একটি চ্যাটবট তৈরি করেছে যা আমেরিকান প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী। এ ছাড়া, চীনা নববর্ষের বিশেষ অনুষ্ঠানে নাচেরত রোবট দর্শকদের মন জয় করেছিল।