ঢাকা ০৫:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
বাংলাদেশের সংস্কার কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানালো যুক্তরাষ্ট্র সংস্কার ও বিচারের আগে নির্বাচন হলে তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে: জামায়াত আমির এসএসসি পরীক্ষার তৃতীয় দিন অনুপস্থিত ২৭ হাজার ৯০৫ জন ‘র’ প্রেসক্রিপশন নিয়ে এসে বাংলাদেশে রাজনীতি চলবে না: হাসনাত ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জুলাই-মার্চ মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১০.৮৪ শতাংশ ইউক্রেনের দনিপ্রোতে রাশিয়ার হামলায় দুইজন নিহত: গভর্নর বিডিআর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতেই হবে: প্রধান উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বিএনপি সন্তুষ্ট নয়: মির্জা ফখরুল পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ ঢাকায় এসেছেন

মিয়ানমারে সামরিক জান্তার নির্বাচনের প্রতিশ্রুতির সম্ভাবনা কতটা?

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:১৯:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫ ২১ বার পড়া হয়েছে

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে দেশটিতে আগামী ডিসেম্বর ২০২৫ বা জানুয়ারি ২০২৬-এ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ঘোষণা বাস্তবায়িত হলে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের কারণে গৃহযুদ্ধে ঠেলে দেওয়ার পর দেশটিতে প্রথম নির্বাচন। তবে, জান্তা সরকারের অধীনে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকায় এবং দেশের বেশিরভাগ অঞ্চল সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকায় গণতন্ত্রের সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিশিষ্ট বিরোধী দলীয় নেত্রী ও নোবেল বিজয়ী অং সান সু চি কারাগারে থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।

নির্বাচন সম্পর্কে আমরা যা জানি:

প্রতিশ্রুত নির্বাচন কী? : শুক্রবার বেলারুশ সফরকালে মিন অং হ্লাইং এই নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, জনগণের অনুরোধে আমরা ইতোমধ্যে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে, ২০২০ সালের নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ী অং সান সু চির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) এই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। ২০২৩ সালে জান্তা-নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন কমিশন সামরিক বাহিনী প্রণীত কঠোর নির্বাচনী আইনের অধীনে পুনঃনিবন্ধন করতে ব্যর্থ হওয়ায় এনএলডিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে।

নির্বাচন কীভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারে? : ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর থেকে জান্তা সরকার গণতন্ত্রপন্থী গেরিলা ও জাতিগত সংখ্যালঘুনযোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াই করছে। সরকারি নিয়ন্ত্রণের পরিধি সম্পর্কে বিভিন্ন অনুমান রয়েছে। নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য করা এক জনশুমারিতে বলা হয়েছে, দেশের ৫১ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে প্রায় ১৯ মিলিয়নের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা যায়নি। এর আংশিক কারণ ‘উল্লেখযোগ্য নিরাপত্তা বাধা’। জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী ও গণতন্ত্রপন্থী যোদ্ধারা তাদের এলাকায় নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার অঙ্গীকারব করেছে।

এখন কেনো নির্বাচন পরিকল্পনা? : সামরিক বাহিনী মিয়ানমারের স্বাধীনতা-পরবর্তী ইতিহাসের বেশিরভাগ সময় শাসন করেছে। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষক মরগান মাইকেলস এএফপিকে বলেন, বিভক্ত সামরিক বাহিনীর মধ্যে শক্তিশালী গোষ্ঠীগুলো নির্বাচনের মাধ্যমে মিন অং হ্লাইংকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। বর্তমানে প্রসিডেন্ট ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান হিসেবে, দেশের ২০০৮ সালের সংবিধান অনুযায়ী একই ব্যক্তি উভয় পদে থাকতে পারেন না, তাই তাকে এর মধ্যে একটি বেছে নিতে হবে।

নির্বাচন কীভাবে দেখা হতে পারে? : আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে জান্তার নির্বাচনী প্রস্তাবগুলোকে সমালোচনা করেছেন। ফেব্রুয়ারিতে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেক্টোরাল অ্যাসিস্ট্যান্সসহ তিনটি পর্যবেক্ষকের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে মিয়ানমারে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব।’ তারা আরও বলেন, এটি বিভাজন গভীর করবে, সহিংসতা বাড়াবে, কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠিত করবে এবং সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে সৃষ্ট সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।

মিয়ানমার ও বিদেশে নির্বাচন সময়মতো অনুষ্ঠিত হবে কিনা তা নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ রয়েছে। দেশটি জরুরি অবস্থায় রয়েছে, যা জানুয়ারিতে ছয় মাসের জন্য বাড়ানো হয়েছে, এবং এখনও সুনির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। মাইকেলস বলেন, ‘আমি তা দেখলে বিশ্বাস করব।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

মিয়ানমারে সামরিক জান্তার নির্বাচনের প্রতিশ্রুতির সম্ভাবনা কতটা?

আপডেট সময় : ১২:১৯:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে দেশটিতে আগামী ডিসেম্বর ২০২৫ বা জানুয়ারি ২০২৬-এ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ঘোষণা বাস্তবায়িত হলে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের কারণে গৃহযুদ্ধে ঠেলে দেওয়ার পর দেশটিতে প্রথম নির্বাচন। তবে, জান্তা সরকারের অধীনে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকায় এবং দেশের বেশিরভাগ অঞ্চল সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকায় গণতন্ত্রের সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিশিষ্ট বিরোধী দলীয় নেত্রী ও নোবেল বিজয়ী অং সান সু চি কারাগারে থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।

নির্বাচন সম্পর্কে আমরা যা জানি:

প্রতিশ্রুত নির্বাচন কী? : শুক্রবার বেলারুশ সফরকালে মিন অং হ্লাইং এই নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, জনগণের অনুরোধে আমরা ইতোমধ্যে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে, ২০২০ সালের নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ী অং সান সু চির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) এই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। ২০২৩ সালে জান্তা-নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন কমিশন সামরিক বাহিনী প্রণীত কঠোর নির্বাচনী আইনের অধীনে পুনঃনিবন্ধন করতে ব্যর্থ হওয়ায় এনএলডিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে।

নির্বাচন কীভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারে? : ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর থেকে জান্তা সরকার গণতন্ত্রপন্থী গেরিলা ও জাতিগত সংখ্যালঘুনযোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াই করছে। সরকারি নিয়ন্ত্রণের পরিধি সম্পর্কে বিভিন্ন অনুমান রয়েছে। নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য করা এক জনশুমারিতে বলা হয়েছে, দেশের ৫১ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে প্রায় ১৯ মিলিয়নের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা যায়নি। এর আংশিক কারণ ‘উল্লেখযোগ্য নিরাপত্তা বাধা’। জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী ও গণতন্ত্রপন্থী যোদ্ধারা তাদের এলাকায় নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার অঙ্গীকারব করেছে।

এখন কেনো নির্বাচন পরিকল্পনা? : সামরিক বাহিনী মিয়ানমারের স্বাধীনতা-পরবর্তী ইতিহাসের বেশিরভাগ সময় শাসন করেছে। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষক মরগান মাইকেলস এএফপিকে বলেন, বিভক্ত সামরিক বাহিনীর মধ্যে শক্তিশালী গোষ্ঠীগুলো নির্বাচনের মাধ্যমে মিন অং হ্লাইংকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। বর্তমানে প্রসিডেন্ট ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান হিসেবে, দেশের ২০০৮ সালের সংবিধান অনুযায়ী একই ব্যক্তি উভয় পদে থাকতে পারেন না, তাই তাকে এর মধ্যে একটি বেছে নিতে হবে।

নির্বাচন কীভাবে দেখা হতে পারে? : আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে জান্তার নির্বাচনী প্রস্তাবগুলোকে সমালোচনা করেছেন। ফেব্রুয়ারিতে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেক্টোরাল অ্যাসিস্ট্যান্সসহ তিনটি পর্যবেক্ষকের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে মিয়ানমারে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব।’ তারা আরও বলেন, এটি বিভাজন গভীর করবে, সহিংসতা বাড়াবে, কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠিত করবে এবং সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে সৃষ্ট সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।

মিয়ানমার ও বিদেশে নির্বাচন সময়মতো অনুষ্ঠিত হবে কিনা তা নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ রয়েছে। দেশটি জরুরি অবস্থায় রয়েছে, যা জানুয়ারিতে ছয় মাসের জন্য বাড়ানো হয়েছে, এবং এখনও সুনির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। মাইকেলস বলেন, ‘আমি তা দেখলে বিশ্বাস করব।