ঢাকা ০৫:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
বিনিয়োগ সংস্থাগুলোকে এক ছাতার নিচে আনার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার বঞ্চিতের ক্ষোভ থেকে তরুণ প্রজন্ম ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়েছে : হাসনাত হোয়াইট হাউসের আয়তন কি ট্রাম্প ও মাস্ককে ধারণ করতে পারবে? স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে নতুনভাবে সংবিধান প্রকাশে গুরুত্বারোপ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রশ্নই উঠে না দেশে সারের কৃত্রিম সংকটের চেষ্টা করলে ডিলারশীপ বাতিল : কৃষি উপদেষ্টা কুমিল্লায় অস্ত্রসহ আটক ৩ জন মেয়াদ শেষে ডাটা-মিনিট পরবর্তী প্যাকেজে যুক্ত করতে লিগ্যাল নোটিশ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আপিলের রায় আগামীকাল জাপানে শক্তিশালী ভূমিকম্প ও সুনামি সতর্কতা

রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ সম্ভব: বিশেষজ্ঞ মতামত

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৫:১৪:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫ ১ বার পড়া হয়েছে

গত কয়েকদিন ধরে রাজ খেলাধুলায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ভবনের নিচতলায় অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলতে যেতেও তার মন নেই। তাকে ক্লান্ত ও নিস্তেজ দেখাচ্ছিল। একদিন রাজ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। বিভিন্ন পরীক্ষার পর চিকিৎসক জানান, রাজ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। এই কারণে সে অন্য শিশুদের মতো দৌড়াতে বা খেলতে পারছে না।

থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তস্বল্পতাজনিত রোগ। এসব রোগী ছোট বয়স থেকেই রক্তস্বল্পতায় ভোগে। এদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- তারা যেহেতু তাদের শরীরে নির্দিষ্ট পরিমাণ রক্ত তৈরি করতে পারে না, তাই অন্যের রক্ত ট্রান্সফিউশন নিয়ে তাদের জীবন চালাতে হয়। থ্যালাসেমিয়ার বাহকদের কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তারা আয়রন জাতীয় খাবারসহ সব ধরনের খাবার স্বাভাবিক মাত্রায় খাবেন দেহের চাহিদা পূরণের জন্য। অনেকে আয়রন জাতীয় খাবার সম্পূর্ণ বর্জন করেন, যার কারণে সহজেই তারা রক্তশূন্যতায় ভোগেন ও দুর্বল হয়ে পড়েন।

থ্যালাসেমিয়া বাংলাদেশে সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত রোগ। পরিসংখ্যানে জানা যায়, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতি ১৪ জনে একজনের থ্যালাসেমিয়ার বাহক রয়েছে আর ৭০ হাজারের বেশি শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। প্রতি বছর সাত হাজার শিশু বিভিন্ন রকমের থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান মতে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৭ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় এক কোটি ১০ লাখ মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। ইন্টারন্যাশনাল থ্যালাসেমিয়া ফেডারেশনের (টিআইএফ) তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী ১০ কোটি থ্যালাসেমিয়ার বাহক রয়েছেন। এছাড়াও প্রতিবছর কমপক্ষে ৩ লাখ শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।

চিকিৎসকরা জানান, থ্যালাসেমিয়ার বাহকেরা রোগী নয়, শুধু এ রোগের আংশিক ত্রু ক্রুটিপূর্ণ জিন বহন করেন। ফলে তাদের স্বল্পমাত্রায় রক্তশূন্যতা থাকতে পারে। বাহ্যিকভাব তাদের কোনো লক্ষণ থাকে না, ফলে বাহক শনাক্ত করতে হিমোগ্লোবিন-ইলেকট্রোফরেসিস পরীক্ষা প্রয়োজন হয়।

প্রতিবছর ৮ মে দেশে ও বিশ্বের অন্যান্য স্থানে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস পালিত হয়। এই বছরের প্রতিপাদ্য ছিল- ‘জীবনের ক্ষমতায়ন, অগ্রগতি আলিঙ্গন: সবার জন্য ন্যায়সঙ্গত ও সহজলভ্য থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসা’। থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে, তাদের সন্তানদের মধ্যে কেউ কেউ থ্যালাসেমিয়ার রোগী হতে পারে, যার ফলে এক বছর বয়স থেকে রক্তশূন্যতা দেখা দেয় এবং তাদের স্বাভাবিক বয়োবৃদ্ধির জন্য প্রায় প্রতি মাসেই নিয়মিত রক্ত পরিসঞ্চালন করতে হয়।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের থ্যালাসেমিয়া সেন্টারের সভাপতি ডা. এ ওয়াকার খান বলেন, থ্যালাসেমিয়া কেবল শিশুর শরীরেই প্রভাব ফেলে না, এটি পরিবারে মানসিক ও সামাজিক সমস্যা তৈরি করে। আজীবনের এই কষ্ট এড়াতে প্রত্যেক দম্পতির সন্তান পরিকল্পনার আগে জেনেটিক পরীক্ষা করানো উচিত।

বিশেষজ্ঞরা থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে বিবাহপূর্ব রক্তপরীক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। যেহেতু বাবা-মা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হলে সন্তানদের ঝুঁকি তৈরি হয় সেহেতু থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধ করার জন্য দুজন বাহকের মধ্যে বিবাহ বর্জন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ডা. মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, রোগটি প্রতিরোধে দেশে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন, এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য উল্লেখ করে আমিনুল বলেন, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় সাত শতাংশ থ্যালাসেমিয়ার বাহক। প্রতি বছর প্রায় ৭ হাজার শিশু এ রোগ নিয়ে জন্মায়।

তিনি আরও জানান, আন্তর্জাতিক থ্যালাসেমিয়া ফেডারেশনের মতে বাংলাদেশে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ থ্যালাসেমিয়া বহন করছে। একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীর বেঁচে থাকার জন্য প্রতি মাসে এক থেকে দুই ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। চিকিৎসা না করা হলে এ রোগীরা রক্তশূন্যতায় মারা যায়।

রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মনজুর মোরশেদ বলেন, দেশে এই রোগের চিকিৎসা সেবা প্রদানে দক্ষ জনবল ও আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। ডা. এ ওয়াকার খান বলেন, ‘থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ। এটি তখনই ঘটে, যখন উভয় বাবা-মা থ্যালাসেমিয়া জিন বহন করেন। যদি এক পক্ষ সুস্থ থাকে, তাহলে সন্তানের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।’

তিনি ব্যাখ্যা করেন, থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তস্বল্পতা রোগ, যা শিশুর বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে এবং তাকে দুর্বল করে তোলে। যদি বাবা-মা উভয় থেকে ত্রুটিযুক্ত জিন উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়, তবে থ্যালাসেমিয়া মেজর হয়। ডা. খান বলেন, ‘যেসব শিশু থ্যালাসেমিয়া পজিটিভ কিন্তু আক্রান্ত নয়, তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। তবে, থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের শরীরে অক্সিজেনের অভাব হয়। রক্তকণিকার ভাঙনের ফলে অতিরিক্ত আয়রন জমা হয়, যা ধীরে ধীরে লিভার ও প্লীহা বড় করে তোলে। অতিরিক্ত আয়রন দূর করার ওষুধও ব্যয়বহুল।’

তিনি আরও বলেন, ‘অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে রোগটি পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব হলেও, এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া বাহকদের পরস্পরের মধ্যে বিয়ের মাধ্যমে প্রতি বছর নতুন করে সাত হাজার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর জন্ম হচ্ছে। বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়ার বাহক নিশ্চিত হয়ে উভয় বাহকের বিবাহ বর্জনের মাধ্যমে এ রোগের বিস্তার কমানো সম্ভব।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ সম্ভব: বিশেষজ্ঞ মতামত

আপডেট সময় : ০৫:১৪:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫

গত কয়েকদিন ধরে রাজ খেলাধুলায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ভবনের নিচতলায় অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলতে যেতেও তার মন নেই। তাকে ক্লান্ত ও নিস্তেজ দেখাচ্ছিল। একদিন রাজ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। বিভিন্ন পরীক্ষার পর চিকিৎসক জানান, রাজ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। এই কারণে সে অন্য শিশুদের মতো দৌড়াতে বা খেলতে পারছে না।

থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তস্বল্পতাজনিত রোগ। এসব রোগী ছোট বয়স থেকেই রক্তস্বল্পতায় ভোগে। এদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- তারা যেহেতু তাদের শরীরে নির্দিষ্ট পরিমাণ রক্ত তৈরি করতে পারে না, তাই অন্যের রক্ত ট্রান্সফিউশন নিয়ে তাদের জীবন চালাতে হয়। থ্যালাসেমিয়ার বাহকদের কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তারা আয়রন জাতীয় খাবারসহ সব ধরনের খাবার স্বাভাবিক মাত্রায় খাবেন দেহের চাহিদা পূরণের জন্য। অনেকে আয়রন জাতীয় খাবার সম্পূর্ণ বর্জন করেন, যার কারণে সহজেই তারা রক্তশূন্যতায় ভোগেন ও দুর্বল হয়ে পড়েন।

থ্যালাসেমিয়া বাংলাদেশে সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত রোগ। পরিসংখ্যানে জানা যায়, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতি ১৪ জনে একজনের থ্যালাসেমিয়ার বাহক রয়েছে আর ৭০ হাজারের বেশি শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। প্রতি বছর সাত হাজার শিশু বিভিন্ন রকমের থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান মতে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৭ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় এক কোটি ১০ লাখ মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। ইন্টারন্যাশনাল থ্যালাসেমিয়া ফেডারেশনের (টিআইএফ) তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী ১০ কোটি থ্যালাসেমিয়ার বাহক রয়েছেন। এছাড়াও প্রতিবছর কমপক্ষে ৩ লাখ শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।

চিকিৎসকরা জানান, থ্যালাসেমিয়ার বাহকেরা রোগী নয়, শুধু এ রোগের আংশিক ত্রু ক্রুটিপূর্ণ জিন বহন করেন। ফলে তাদের স্বল্পমাত্রায় রক্তশূন্যতা থাকতে পারে। বাহ্যিকভাব তাদের কোনো লক্ষণ থাকে না, ফলে বাহক শনাক্ত করতে হিমোগ্লোবিন-ইলেকট্রোফরেসিস পরীক্ষা প্রয়োজন হয়।

প্রতিবছর ৮ মে দেশে ও বিশ্বের অন্যান্য স্থানে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস পালিত হয়। এই বছরের প্রতিপাদ্য ছিল- ‘জীবনের ক্ষমতায়ন, অগ্রগতি আলিঙ্গন: সবার জন্য ন্যায়সঙ্গত ও সহজলভ্য থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসা’। থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে, তাদের সন্তানদের মধ্যে কেউ কেউ থ্যালাসেমিয়ার রোগী হতে পারে, যার ফলে এক বছর বয়স থেকে রক্তশূন্যতা দেখা দেয় এবং তাদের স্বাভাবিক বয়োবৃদ্ধির জন্য প্রায় প্রতি মাসেই নিয়মিত রক্ত পরিসঞ্চালন করতে হয়।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের থ্যালাসেমিয়া সেন্টারের সভাপতি ডা. এ ওয়াকার খান বলেন, থ্যালাসেমিয়া কেবল শিশুর শরীরেই প্রভাব ফেলে না, এটি পরিবারে মানসিক ও সামাজিক সমস্যা তৈরি করে। আজীবনের এই কষ্ট এড়াতে প্রত্যেক দম্পতির সন্তান পরিকল্পনার আগে জেনেটিক পরীক্ষা করানো উচিত।

বিশেষজ্ঞরা থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে বিবাহপূর্ব রক্তপরীক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। যেহেতু বাবা-মা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হলে সন্তানদের ঝুঁকি তৈরি হয় সেহেতু থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধ করার জন্য দুজন বাহকের মধ্যে বিবাহ বর্জন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ডা. মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, রোগটি প্রতিরোধে দেশে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন, এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য উল্লেখ করে আমিনুল বলেন, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় সাত শতাংশ থ্যালাসেমিয়ার বাহক। প্রতি বছর প্রায় ৭ হাজার শিশু এ রোগ নিয়ে জন্মায়।

তিনি আরও জানান, আন্তর্জাতিক থ্যালাসেমিয়া ফেডারেশনের মতে বাংলাদেশে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ থ্যালাসেমিয়া বহন করছে। একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীর বেঁচে থাকার জন্য প্রতি মাসে এক থেকে দুই ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। চিকিৎসা না করা হলে এ রোগীরা রক্তশূন্যতায় মারা যায়।

রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মনজুর মোরশেদ বলেন, দেশে এই রোগের চিকিৎসা সেবা প্রদানে দক্ষ জনবল ও আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। ডা. এ ওয়াকার খান বলেন, ‘থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ। এটি তখনই ঘটে, যখন উভয় বাবা-মা থ্যালাসেমিয়া জিন বহন করেন। যদি এক পক্ষ সুস্থ থাকে, তাহলে সন্তানের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।’

তিনি ব্যাখ্যা করেন, থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তস্বল্পতা রোগ, যা শিশুর বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে এবং তাকে দুর্বল করে তোলে। যদি বাবা-মা উভয় থেকে ত্রুটিযুক্ত জিন উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়, তবে থ্যালাসেমিয়া মেজর হয়। ডা. খান বলেন, ‘যেসব শিশু থ্যালাসেমিয়া পজিটিভ কিন্তু আক্রান্ত নয়, তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। তবে, থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের শরীরে অক্সিজেনের অভাব হয়। রক্তকণিকার ভাঙনের ফলে অতিরিক্ত আয়রন জমা হয়, যা ধীরে ধীরে লিভার ও প্লীহা বড় করে তোলে। অতিরিক্ত আয়রন দূর করার ওষুধও ব্যয়বহুল।’

তিনি আরও বলেন, ‘অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে রোগটি পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব হলেও, এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া বাহকদের পরস্পরের মধ্যে বিয়ের মাধ্যমে প্রতি বছর নতুন করে সাত হাজার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর জন্ম হচ্ছে। বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়ার বাহক নিশ্চিত হয়ে উভয় বাহকের বিবাহ বর্জনের মাধ্যমে এ রোগের বিস্তার কমানো সম্ভব।