ঢাকা ০৮:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
নিরাপদ বাংলাদেশ গঠনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৪ দফা দাবি আমরা সকল জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই : মির্জা ফখরুল নির্বাচনে কারা আসবে বা আসবে না, সেই সিদ্ধান্ত কমিশনের : বদিউল আলম চাঁদাবাজি আগেও হয়েছে এখনো হচ্ছে, শুধু হাতবদল হয়েছে: ডা. শফিকুর রহমান গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় একটি অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান গত ৫ আগষ্ট পুলিশের লুট হওয়া ১টি অস্ত্র উদ্ধার শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির আবেদন ডিসেম্বরের ২১ দিনে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে চাঁদপুরে দুই লঞ্চের সংঘর্ষ, অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন বহু যাত্রী উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে উপদেষ্টা পরিষদের শোক

আশ্রয় শিবিরে এক মাসে চিকিৎসা নিয়েছে ২১ হাজার ২৬৭ রোহিঙ্গা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৫২:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ১২ বার পড়া হয়েছে

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের আশ্রয় শিবিরে ছোঁয়াচে ‘কনজাংটিভাইটিস’ নামের চক্ষু রোগের প্রার্দুভাবে গত এক মাসে চিকিৎসা নিয়েছে ২১ হাজার ২৬৭ রোহিঙ্গা। অল্প জায়গায় ধারণক্ষমতার বেশি লোক বসবাসের কারণে একজনের কাছ থেকে অন্যজনের মাঝে এ রোগ দ্রুত ছড়াচ্ছে। এ প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে রোহিঙ্গারা। কক্সবাজার শহর থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে ৫০ হাজার রোহিঙ্গার বসতি হাকিমপাড়ায় (ক্যাম্প-১৪) গিয়ে দেখা যায়, একটি পাহাড়ি ঢালুতে তৈরি একটি ত্রিপলের ছাউনির ঘরে স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে থাকেন রোহিঙ্গা মোহাম্মদ আলী। ২৫ দিন আগে তার ১০ বছর বয়সী ছেলে আলী জোহারের একটা চোঁখ থেকে পানি ঝরা শুরু হয়।

তিন দিন পর দুই চোঁখে ব্যথা ও জ্বালাপোড়া করতে থাকে। ব্যথা ও জ্বালাপোড়ার যন্ত্রণায় সারাক্ষণ কান্নাকাটি করে শিশুটি। বাবা মোহাম্মদ আলী বলেন, প্রায় দুই মাস আগে তার স্ত্রীর প্রথম রোগটি হয়। এরপর পাঁচ সদস্যের পরিবারে চারজনই আক্রান্ত হন এই চক্ষুরোগে। চোঁখের ড্রপ ও ওষুধ খেলে কয়েকদিন ভালো থাকে, জ্বালাপোড়া কমে যায়। পরে আবার শুরু হয়। এ আশ্রয়শিবিরের সি, ডি ও এফ ব্লক ঘুরে অন্তত ২০ জন রোহিঙ্গার বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি ঘরে একাধিক নারী-শিশু-কিশোর এ রোগে আক্রান্ত। আয়েশা বেগম ও রুহুল আমিন বলেন, এমন কোনো রোহিঙ্গা পরিবার নেই, যেখানে চোঁখের রোগী নেই।

একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে পড়ছে এ রোগ। এমন পরিস্থিতিতে চক্ষু রোগে আক্রান্ত পরিবারের সদস্যকে আলাদা রাখার সুযোগ নেই জানিয়ে আহমেদ উল্লাহ বলেন, এক মাস ধরে তার এক কিশোরী মেয়ে ও স্ত্রী চক্ষু রোগে আক্রান্ত। অন্য সদস্যরা যেকোনো মুহূর্তে আক্রান্ত হতে পারে। রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে চক্ষু রোগ নিয়ে ২০১৭ সাল থেকে কাজ করছে কক্সবাজার বায়তুশ শরফ হাসপাতাল। এ হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ, যিনি দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের চোঁখের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন ডাক্তার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, কনজাংটিভাইটিস রোগটি পিঙ্ক আই বা মাদ্রাজ আই নামেও পরিচিত, এটি চোখের সাদা অংশের বাইরের স্তর এবং চোখের পাতার ভিতরের পৃষ্ঠের প্রদাহ।

এটি চোখকে গোলাপী বা লালচে দেখায়। ব্যথা, জ্বালাপোড়া, ঘামাচি বা চুলকানিও হতে পারে। কক্সবাজার বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতালের তথ্যমতে, ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৭ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা চোখের প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। এরমধ্যে ৩৫ হাজার রোহিঙ্গাকে চোখের ছানি অপারেশন করা হয়েছে। ৭২ হাজার রোগীকে বিনামূল্যে চশমা দেয়া হয়েছে। এক লক্ষ ৬০ হাজারের অধিক রোগীকে বিনামূল্যে ঔষধ প্রদান করা হয়েছে। সর্বশেষ গত অক্টোবর মাসে ২১ হাজার ২৬৭ রোহিঙ্গাকে বিনামূল্যে চোঁখের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। অরবিস ইন্টারন্যাশনাল, নূর দুবাই ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার সহযোগিতায় কক্সবাজার বায়তুশ শরফ হাসপাতাল রোহিঙ্গাদের এ চিকিৎসা সহায়তা দিচ্ছে।

কক্সবাজার বায়তুশ কমপ্লেক্সের মহাপরিচালক এমএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নাগরিকদের চক্ষু চিকিৎসা প্রদান করে আসছে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একমাত্র বিশেষায়িত চক্ষু হাসপাতাল কক্সবাজার বায়তুশ শরফ হাসপাতাল। কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা: আসিফ আহমেদ হাওলাদার বলেন, রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে চক্ষু রোগী বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি শোনার পর তাদেরকে কিভাবে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা যায় তা নিয়ে আমরা কাজ করছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

আশ্রয় শিবিরে এক মাসে চিকিৎসা নিয়েছে ২১ হাজার ২৬৭ রোহিঙ্গা

আপডেট সময় : ১১:৫২:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের আশ্রয় শিবিরে ছোঁয়াচে ‘কনজাংটিভাইটিস’ নামের চক্ষু রোগের প্রার্দুভাবে গত এক মাসে চিকিৎসা নিয়েছে ২১ হাজার ২৬৭ রোহিঙ্গা। অল্প জায়গায় ধারণক্ষমতার বেশি লোক বসবাসের কারণে একজনের কাছ থেকে অন্যজনের মাঝে এ রোগ দ্রুত ছড়াচ্ছে। এ প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে রোহিঙ্গারা। কক্সবাজার শহর থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে ৫০ হাজার রোহিঙ্গার বসতি হাকিমপাড়ায় (ক্যাম্প-১৪) গিয়ে দেখা যায়, একটি পাহাড়ি ঢালুতে তৈরি একটি ত্রিপলের ছাউনির ঘরে স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে থাকেন রোহিঙ্গা মোহাম্মদ আলী। ২৫ দিন আগে তার ১০ বছর বয়সী ছেলে আলী জোহারের একটা চোঁখ থেকে পানি ঝরা শুরু হয়।

তিন দিন পর দুই চোঁখে ব্যথা ও জ্বালাপোড়া করতে থাকে। ব্যথা ও জ্বালাপোড়ার যন্ত্রণায় সারাক্ষণ কান্নাকাটি করে শিশুটি। বাবা মোহাম্মদ আলী বলেন, প্রায় দুই মাস আগে তার স্ত্রীর প্রথম রোগটি হয়। এরপর পাঁচ সদস্যের পরিবারে চারজনই আক্রান্ত হন এই চক্ষুরোগে। চোঁখের ড্রপ ও ওষুধ খেলে কয়েকদিন ভালো থাকে, জ্বালাপোড়া কমে যায়। পরে আবার শুরু হয়। এ আশ্রয়শিবিরের সি, ডি ও এফ ব্লক ঘুরে অন্তত ২০ জন রোহিঙ্গার বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি ঘরে একাধিক নারী-শিশু-কিশোর এ রোগে আক্রান্ত। আয়েশা বেগম ও রুহুল আমিন বলেন, এমন কোনো রোহিঙ্গা পরিবার নেই, যেখানে চোঁখের রোগী নেই।

একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে পড়ছে এ রোগ। এমন পরিস্থিতিতে চক্ষু রোগে আক্রান্ত পরিবারের সদস্যকে আলাদা রাখার সুযোগ নেই জানিয়ে আহমেদ উল্লাহ বলেন, এক মাস ধরে তার এক কিশোরী মেয়ে ও স্ত্রী চক্ষু রোগে আক্রান্ত। অন্য সদস্যরা যেকোনো মুহূর্তে আক্রান্ত হতে পারে। রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে চক্ষু রোগ নিয়ে ২০১৭ সাল থেকে কাজ করছে কক্সবাজার বায়তুশ শরফ হাসপাতাল। এ হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ, যিনি দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের চোঁখের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন ডাক্তার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, কনজাংটিভাইটিস রোগটি পিঙ্ক আই বা মাদ্রাজ আই নামেও পরিচিত, এটি চোখের সাদা অংশের বাইরের স্তর এবং চোখের পাতার ভিতরের পৃষ্ঠের প্রদাহ।

এটি চোখকে গোলাপী বা লালচে দেখায়। ব্যথা, জ্বালাপোড়া, ঘামাচি বা চুলকানিও হতে পারে। কক্সবাজার বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতালের তথ্যমতে, ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৭ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা চোখের প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। এরমধ্যে ৩৫ হাজার রোহিঙ্গাকে চোখের ছানি অপারেশন করা হয়েছে। ৭২ হাজার রোগীকে বিনামূল্যে চশমা দেয়া হয়েছে। এক লক্ষ ৬০ হাজারের অধিক রোগীকে বিনামূল্যে ঔষধ প্রদান করা হয়েছে। সর্বশেষ গত অক্টোবর মাসে ২১ হাজার ২৬৭ রোহিঙ্গাকে বিনামূল্যে চোঁখের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। অরবিস ইন্টারন্যাশনাল, নূর দুবাই ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার সহযোগিতায় কক্সবাজার বায়তুশ শরফ হাসপাতাল রোহিঙ্গাদের এ চিকিৎসা সহায়তা দিচ্ছে।

কক্সবাজার বায়তুশ কমপ্লেক্সের মহাপরিচালক এমএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নাগরিকদের চক্ষু চিকিৎসা প্রদান করে আসছে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একমাত্র বিশেষায়িত চক্ষু হাসপাতাল কক্সবাজার বায়তুশ শরফ হাসপাতাল। কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা: আসিফ আহমেদ হাওলাদার বলেন, রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে চক্ষু রোগী বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি শোনার পর তাদেরকে কিভাবে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা যায় তা নিয়ে আমরা কাজ করছি।