আসাদ পরিবারের শাসনের অবসান ঘটিয়েছে বিদ্রোহী যোদ্ধারা
- আপডেট সময় : ১১:৫৬:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০ বার পড়া হয়েছে
দীর্ঘ ৫৪ বছরের আসাদ পরিবারের শাসনের অবসান ঘটিয়েছে বিদ্রোহী যোদ্ধারা। তাদের আক্রমণের মুখে মাত্র ১২ দিনে ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়েছে দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। ১৯৭১ সাল থেকে আসাদের পরিবার সিরিয়া শাসন করে আসছিল। দীর্ঘ সময় ক্ষমতা ধরে রাখা আসাদ সরকারের পতনের পেছনে কারা রয়েছে-তাদের সম্পর্কেই উঠে এসেছে বিবিসির প্রতিবেদনে। আসাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে ইসলামপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল শাম (এইচটিএস)। সিরিয়ার দীর্ঘ সংঘাতময় ইতিহাসে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এই গোষ্ঠী। ২০১১ সালে, এইচটিএস যাত্রা করে অন্য একটি নামে।
আল-কায়েদার সরাসরি সহযোগী হিসাবে জাবহাত আল-নুসরা নামে যাত্রা করে গোষ্ঠীটি। ইসলামিক স্টেট (আইএস) নেতা আবু বকর আল-বাগদাদিও এই গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠায় ভ‚মিকা রাখেন। তাদের জিহাদি মতাদর্শ অনেক ক্ষেত্রেই বিপ্লবী মতাদর্শকে ছাপিয়ে যেত। তবে এরা আসাদবিরোধী লড়াইয়ে অন্যতম কার্যকর ও ভয়ংকর গোষ্ঠী হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। ‘ফ্রি সিরিয়া’ ব্যানারের আওতাধীন প্রধান বিদ্রোহী জোটের সঙ্গে মাঝে মধ্যেই সম্পর্কে টানাপড়েন তৈরি হতো তাদের। ২০১৬ সালে গোষ্ঠীটির নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জাওলানি প্রকাশ্যে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। এরপর তিনি জাবহাত আল-নুসরাকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে নতুন সংগঠন গঠন করেন।
সংগঠনটির নাম দেন তাহরির আল-শাম। এক বছর পর এর সঙ্গে একীভূত হয় আরও বেশকিছু গোষ্ঠী। বেশ কিছু সময় ধরেই উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ইদলিব প্রদেশে শক্ত ঘাঁটি গেড়েছে এইচটিএস। সেখানে তারাই স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকায় রয়েছে। যদিও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের কারণে তাদের বৈধতা আটকে গিয়েছিল। এছাড়া আরও কয়েকটি গোষ্ঠীর সঙ্গেও অন্তর্দ্বন্দ্ব চলছে এইচটিএসের। আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর থেকে এইচটিএস শুধু সিরিয়ায় শাসন তাদের প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়েই এগিয়েছে।
আইএসের মতো বৃহত্তর খেলাফত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেনি তারা। উলেখ্য, ১৯৬৩ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে আরব সোশ্যালিস্ট বাথ পার্টি। ১৯৭০ সালে বাথ পার্টির অভ্যন্তরীণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন হাফেজ আল-আসাদ। ১৯৭১ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট হন। তার মৃত্যুর পর ২০০০ সালে প্রেসিডেন্ট হন তার ছেলে বাশার আল আসাদ। কিন্তু শনিবার রাত থেকে দামেস্কের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হলে পরিস্থিতি দ্রুত পালটে যায়।
বিক্ষোভকারীরা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে প্রবেশ করেন। এর ফলে রাজধানীর ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রায় সম্পূর্ণ হারিয়ে যায়। বিরোধী দল এক টেলিভিশন বিবৃতিতে জানায়, তারা দামেস্ক মুক্ত করেছে এবং প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ২৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। তারা ঘোষণা দেয়, স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদকে উৎখাত করা হয়েছে। দামেস্কের সেডনায়া কারাগার, যা শাসকগোষ্ঠীর নৃশংস নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত, সেখানে বিক্ষোভকারীরা অভিযান চালিয়ে সব বন্দিকে মুক্ত করে।