ঢাকা ১০:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ফ্যাসিবাদমুক্ত করতে আমাদের তরুণ প্রজন্ম লড়াই-সংগ্রাম করেছে : মির্জা ফখরুল মতিঝিল আরামবাগে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে অস্ত্রসহ ২ জন গ্রেপ্তার সরকার জনগণকে সাথে নিয়ে প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় কাজ করছে: পরিবেশ উপদেষ্টা চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার ডিপোর ‘গোপন চুক্তি’ বাতিল চেয়ে আইনি নোটিশ বিচার শেষ হওয়ার আগে আ. লীগের কার্যক্রম-নিবন্ধন স্থগিত করতে হবে : রাশেদ খান ফলাফল ঘোষণার চব্বিশ ঘণ্টায় মোজাম্বিকে ২১ জন নিহত উত্তরবঙ্গের বৈষম্য ঘোচাতে কাজ করবে অন্তর্বর্তী সরকার : আসিফ মাহমুদ সংস্কৃতি ভ্রাতৃত্ববোধ ও ভালোবাসা জাগিয়ে তোলার বৈপ্লবিক উপাদান : রাহাত ফতেহ আলী খান সারা দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় বড় দিন উদযাপিত জাহাজে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে কুপিয়ে হত্যা ৭ জনকে: র‍্যাব

কমিউনিটি ক্লিনিকে বিনামূল্যে মিলছে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৪১:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৭ বার পড়া হয়েছে

রাজশাহীর পবা উপজেলার কুমড়াপুকুর এলাকার বাসিন্দা জামিলা খাতুন ও নাসির হোসেন দম্পতি। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। রোগ জেনেও অর্থ সংকটে নিয়মিত ওষুধ না খাওয়ায় এরই মধ্যে হৃদরোগসহ শরীরে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে তাদের। তবে গত দুইমাস থেকে কুমড়াপুকুর কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের ওষুধ বিনামূল্যে পাচ্ছেন তারা। এতে নিয়ন্ত্রণে আছে এ রোগ।

নওহাটা ইউনিয়নের কুমড়া পুকুর ও তেতুলিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে এসেছেন আরিফা বেগম (৩৭)। ১৬ বছর ধরে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তিনি। প্রতি মাসে ওষুধের পেছনেই ব্যয় হতো ছয় হাজার টাকা। কৃষক পরিবারের স্বল্প আয়ে সে ব্যয় মেটানো কষ্টকর হয়ে উঠেছিল। তবে সরকারি উদ্যোগে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে বিনামূল্যে ওষুধ ও পরামর্শের পর তার কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়েছে।

কুমড়া পুকুর কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা আনিকুল জানান, স্ট্রোকের পর থেকে উচ্চরক্তচাপের ওষুধ খাচ্ছেন তিনি। প্রথম বছর তিনেক কিনে খেয়েছেন। ২০২৩ সালের মে মাস থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এনসিডি কর্ণার থেকে বিনামূল্যে উচ্চরক্তচাপের ওষুধ পাচ্ছেন। উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বাড়ি থেকে একটু দূরে। যাতায়াত সমস্যা। সেজন্য নিয়মিত যেতে তার অনীহা ছিলো। কিন্তু এখন তিনি ওষুধ পাচ্ছেন বাড়ির কাছের কমিউিনিটি ক্লিনিক থেকে।

হুজুরিপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) মফিজুল ইসলাম বলেন, ক্লিনিকটিতে প্রতিদিন অন্তত ৩০-৪০ জন মানুষ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, কৈশোরকালীন সেবা, নবজাতক ও গর্ভবতী নারীরা সেবা নিতে আসেন। এর বাইরে অসংক্রামক রোগাক্রান্ত (উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস) মানুষ ওষুধ ও পরামর্শের জন্য আসেন। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রোগীদের লিখে দিলে আমরা তাদের দেই।

দারুসা ইউনিয়নের তেতুলিয়া গ্রামের আব্দুল রশিদের উচ্চরক্তচাপের ওষুধ নিতে এসেছেন তেতুলিয়া কমিউিনিটি ক্লিনিকে। এই ক্লিনিকটি তার বাড়ির কাছেই। বাড়ির কাছ থেকে উচ্চরক্তচাপের ওষুধ পেয়ে খুব খুশি তিনি।
তিনি জানান, আগে উপজেলায় যেতে সময় বেশি লাগতো, যাতায়াতে টাকা খরচ হতো, এখন আর তা হবে না। বাড়ির কাছেই যেহেতু, হেঁটে এসে নিয়মিত ওষুধ নিতে পারবেন। আর অনিয়মিত হবে না। শুধু তিনিই নন; তার মত অনেকেই এখানে এসেছেন উচ্চরক্তচাপের ওষুধ নিতে। বিনামূল্যে ওষুধ পেয়ে সবাই খুব খুশি।

বাংলাদেশও উচ্চ রক্তচাপের নীরব মহামারির মধ্যে রয়েছে। সর্বশেষ ‘বাংলাদেশ এনসিডি স্টেপস সার্ভে, ২০২২’ এর তথ্য অনুযায়ী প্রতি ৪ জনে ১ জন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ (২৩.৫%) উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। নীরবে উচ্চ রক্তচাপ শরীরের বিভিন্ন অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এসব বিবেচনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনসিডিসি) ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন দেশের ২৩ জেলার ১৮২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং চারটি সদর হাসপাতালের এনসিডি কর্নারে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

যার উদ্দেশ্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত করা, চিকিৎসা ও ফলোআপ কার্যক্রম শক্তিশালী করা। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজশাহীর ৯টি উপজেলার ২৩৬ কমিউনিটি ক্লিনিক এবং দেশের ১৮২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই সেবা প্রদান করছে। রাজশাহীতে এই প্রকল্প শুরু হয়েছে ২০২৩ সালে। রাজশাহী বিভাগের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নেওয়া রোগীদের মধ্যে ৫৭ ভাগ রোগীর উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

দেশব্যাপী এই কর্মকান্ড ছড়িয়ে দিতে আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচআই) সহায়তায় গবেষণা এবং অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞার (প্রগতির জন্য জ্ঞান) মাধ্যমে মিডিয়া অ্যাডভোকেসির কাজ চলছে। এর উদ্দেশ্য, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস শনাক্ত করা, বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ প্রদান এবং ফলোআপ করা।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন জানায়, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে তৃণমূল পর্যায়ে প্রকল্পটি আরো সফল করতে পরীক্ষামূলকভাবে সিলেট জেলার ৪টি উপজেলার (গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিশ্বনাথ এবং বিয়ানীবাজার) ৮৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সরকারিভাবে বিনামূল্যে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ প্রদান শুরু হয়। উচ্চ রক্তচাপের ক্রমবর্ধমান প্রকোপ মোকাবেলায় কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট (সিসিএইচএসটি) এর কমিউনিটি ক্লিনিকে ব্যবহৃত ঔষধের তালিকা হালনাগাদকরণ কমিটির ২০২৩ সালের ১৪ মে অনুষ্ঠিত সভায় কমিউনিটি ক্লিনিকের ওষুধ তালিকায় উচ্চ রক্তচাপের জন্য এমলোডিপিন ৫ মিলি গ্রাম ও ডায়বেটিস এর জন্য মেটফরমিন ৫০০ মিলি গ্রাম সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ইতোমধ্যে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির বিভাগীয় প্রোগ্রাম অফিসার এহসানুল আমিন ইমন বলেন, কমিউনিটি পর্যায়ে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের ওষুধ বিনামূল্যে দিচ্ছে সরকার। তবে দূরত্ব, সময় ও পরিবহন ব্যয়ের কারণে প্রায় ৫ হাজারের অধিক উচ্চ রক্তচাপের রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে  ফলোআপে প্রতি মাসে নিয়মিত আসেন না। তাদের হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকে সারা বছর চাহিদা আনুসারে ওষুধপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা গেলে দেশে হৃদরোগে মৃত্যুর হার কাক্সিক্ষত পর্যায়ে কমানো সম্ভব।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

কমিউনিটি ক্লিনিকে বিনামূল্যে মিলছে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ

আপডেট সময় : ১১:৪১:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪

রাজশাহীর পবা উপজেলার কুমড়াপুকুর এলাকার বাসিন্দা জামিলা খাতুন ও নাসির হোসেন দম্পতি। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। রোগ জেনেও অর্থ সংকটে নিয়মিত ওষুধ না খাওয়ায় এরই মধ্যে হৃদরোগসহ শরীরে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে তাদের। তবে গত দুইমাস থেকে কুমড়াপুকুর কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের ওষুধ বিনামূল্যে পাচ্ছেন তারা। এতে নিয়ন্ত্রণে আছে এ রোগ।

নওহাটা ইউনিয়নের কুমড়া পুকুর ও তেতুলিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে এসেছেন আরিফা বেগম (৩৭)। ১৬ বছর ধরে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তিনি। প্রতি মাসে ওষুধের পেছনেই ব্যয় হতো ছয় হাজার টাকা। কৃষক পরিবারের স্বল্প আয়ে সে ব্যয় মেটানো কষ্টকর হয়ে উঠেছিল। তবে সরকারি উদ্যোগে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে বিনামূল্যে ওষুধ ও পরামর্শের পর তার কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়েছে।

কুমড়া পুকুর কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা আনিকুল জানান, স্ট্রোকের পর থেকে উচ্চরক্তচাপের ওষুধ খাচ্ছেন তিনি। প্রথম বছর তিনেক কিনে খেয়েছেন। ২০২৩ সালের মে মাস থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এনসিডি কর্ণার থেকে বিনামূল্যে উচ্চরক্তচাপের ওষুধ পাচ্ছেন। উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বাড়ি থেকে একটু দূরে। যাতায়াত সমস্যা। সেজন্য নিয়মিত যেতে তার অনীহা ছিলো। কিন্তু এখন তিনি ওষুধ পাচ্ছেন বাড়ির কাছের কমিউিনিটি ক্লিনিক থেকে।

হুজুরিপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) মফিজুল ইসলাম বলেন, ক্লিনিকটিতে প্রতিদিন অন্তত ৩০-৪০ জন মানুষ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, কৈশোরকালীন সেবা, নবজাতক ও গর্ভবতী নারীরা সেবা নিতে আসেন। এর বাইরে অসংক্রামক রোগাক্রান্ত (উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস) মানুষ ওষুধ ও পরামর্শের জন্য আসেন। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রোগীদের লিখে দিলে আমরা তাদের দেই।

দারুসা ইউনিয়নের তেতুলিয়া গ্রামের আব্দুল রশিদের উচ্চরক্তচাপের ওষুধ নিতে এসেছেন তেতুলিয়া কমিউিনিটি ক্লিনিকে। এই ক্লিনিকটি তার বাড়ির কাছেই। বাড়ির কাছ থেকে উচ্চরক্তচাপের ওষুধ পেয়ে খুব খুশি তিনি।
তিনি জানান, আগে উপজেলায় যেতে সময় বেশি লাগতো, যাতায়াতে টাকা খরচ হতো, এখন আর তা হবে না। বাড়ির কাছেই যেহেতু, হেঁটে এসে নিয়মিত ওষুধ নিতে পারবেন। আর অনিয়মিত হবে না। শুধু তিনিই নন; তার মত অনেকেই এখানে এসেছেন উচ্চরক্তচাপের ওষুধ নিতে। বিনামূল্যে ওষুধ পেয়ে সবাই খুব খুশি।

বাংলাদেশও উচ্চ রক্তচাপের নীরব মহামারির মধ্যে রয়েছে। সর্বশেষ ‘বাংলাদেশ এনসিডি স্টেপস সার্ভে, ২০২২’ এর তথ্য অনুযায়ী প্রতি ৪ জনে ১ জন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ (২৩.৫%) উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। নীরবে উচ্চ রক্তচাপ শরীরের বিভিন্ন অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এসব বিবেচনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনসিডিসি) ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন দেশের ২৩ জেলার ১৮২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং চারটি সদর হাসপাতালের এনসিডি কর্নারে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

যার উদ্দেশ্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত করা, চিকিৎসা ও ফলোআপ কার্যক্রম শক্তিশালী করা। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজশাহীর ৯টি উপজেলার ২৩৬ কমিউনিটি ক্লিনিক এবং দেশের ১৮২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই সেবা প্রদান করছে। রাজশাহীতে এই প্রকল্প শুরু হয়েছে ২০২৩ সালে। রাজশাহী বিভাগের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নেওয়া রোগীদের মধ্যে ৫৭ ভাগ রোগীর উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

দেশব্যাপী এই কর্মকান্ড ছড়িয়ে দিতে আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচআই) সহায়তায় গবেষণা এবং অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞার (প্রগতির জন্য জ্ঞান) মাধ্যমে মিডিয়া অ্যাডভোকেসির কাজ চলছে। এর উদ্দেশ্য, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস শনাক্ত করা, বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ প্রদান এবং ফলোআপ করা।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন জানায়, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে তৃণমূল পর্যায়ে প্রকল্পটি আরো সফল করতে পরীক্ষামূলকভাবে সিলেট জেলার ৪টি উপজেলার (গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিশ্বনাথ এবং বিয়ানীবাজার) ৮৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সরকারিভাবে বিনামূল্যে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ প্রদান শুরু হয়। উচ্চ রক্তচাপের ক্রমবর্ধমান প্রকোপ মোকাবেলায় কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট (সিসিএইচএসটি) এর কমিউনিটি ক্লিনিকে ব্যবহৃত ঔষধের তালিকা হালনাগাদকরণ কমিটির ২০২৩ সালের ১৪ মে অনুষ্ঠিত সভায় কমিউনিটি ক্লিনিকের ওষুধ তালিকায় উচ্চ রক্তচাপের জন্য এমলোডিপিন ৫ মিলি গ্রাম ও ডায়বেটিস এর জন্য মেটফরমিন ৫০০ মিলি গ্রাম সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ইতোমধ্যে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির বিভাগীয় প্রোগ্রাম অফিসার এহসানুল আমিন ইমন বলেন, কমিউনিটি পর্যায়ে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের ওষুধ বিনামূল্যে দিচ্ছে সরকার। তবে দূরত্ব, সময় ও পরিবহন ব্যয়ের কারণে প্রায় ৫ হাজারের অধিক উচ্চ রক্তচাপের রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে  ফলোআপে প্রতি মাসে নিয়মিত আসেন না। তাদের হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকে সারা বছর চাহিদা আনুসারে ওষুধপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা গেলে দেশে হৃদরোগে মৃত্যুর হার কাক্সিক্ষত পর্যায়ে কমানো সম্ভব।